রাখি কেন ঝুলন্ত লাশ হলো?

দুই বছর আগে বই উৎসবের দিনে বই নিয়েছিল রাখি আক্তার। ছবিটি এখন শুধুই স্মৃতি। ছবি: সংগৃহীত
দুই বছর আগে বই উৎসবের দিনে বই নিয়েছিল রাখি আক্তার। ছবিটি এখন শুধুই স্মৃতি। ছবি: সংগৃহীত

দুই বছর আগে বই উৎসবের অনুষ্ঠানে স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে অষ্টম শ্রেণির বই নিয়েছিল মেধাবী রাখি আক্তার। ছবিটি তখনকার স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য মুজিবর রহমানের মুঠোফোনে রয়ে গিয়েছিল। উৎসব মুহূর্তের সেই ছবি আজ বেদনার স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। রাখি আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মা–বাবার শয়নকক্ষে তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে।

রাখির লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন মুজিবুর রহমান। মুঠোফোনের ছবিটি বের করে বারবার আফসোস করছিলেন।

রাখি আক্তার (১৫) জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর এলাকার সোনামুখী গ্রামের আনিছুর রহমানের মেয়ে। সোনামুখী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। পরিবারের ধারণা, রাখি আত্মহত্যা করেছে। তবে আত্মহত্যার পেছনের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তারা।

গ্রামবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাখি আক্তারের বাবা আনিছুর রহমান মুরগির পাইকার। তাঁর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে রাখি বড়। রাখি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। আদরের মেয়েকে মা–বাবা এবার ঈদে তিন সেট জামা কিনে দিয়েছিলেন। বুধবার ঈদের দিন তাকে নতুন জামা-কাপড় পরে হাসিমুখে ঈদ উদ্‌যাপন করতে দেখেছে সবাই। গতকালও তাকে বিষণ্ন থাকতে দেখেনি কেউ।

রাখি আক্তারের মা বেদেনা খাতুন জানান, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি রাখিকে বাড়িতে একা রেখে ফসলি জমি দেখতে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাড়ি ফিরে তিনি মেয়েকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাননি। তখন তিনি বাড়ির দোতলায় নিজেদের শয়নকক্ষে ঢুকে মেয়েকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে রাখিকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন।
পুলিশ রাত নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি লাশ থানায় নিয়ে যায়। আজ শুক্রবার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মেয়ে হারানোর শোকে আহাজারি করছিলেন মা বেদেনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রাখিকে ঝুলতে দেখে আমি চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার মেয়ে কেন আত্মহত্যা করল?’

বাবা আনিছুর রহমান বলেন, ‘মেয়েকে হাসিখুশি রেখে আমি জয়পুরহাটে গিয়েছিলাম। ঈদে মেয়েকে তিন সেট জামা-কাপড় কিনে দিয়েছি। নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদের দিন ঘোরাফেরা করেছে। কেন এভাবে আমার মেয়ে মরল তার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’

প্রতিবেশী মন্টু মিয়া বলেন, ‘রাখি খুব মেধাবী ছিল। কেন সে মারা গেল, ভেবে পাচ্ছি না। কোনো কারণ ছাড়া তো মেয়েটি এভাবে মরতে পারে না।’

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কিরণ কুমার রায় বলেন, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি লাগানো অবস্থায় মেয়েটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুবিষয়ক মামলা হয়েছে।