গায়ে কেরোসিন ঢেলে গৃহবধূকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় এক গৃহবধূকে (২২) শ্বশুরবাড়ির লোকজন আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত গৃহবধূ গত বৃহস্পতিবার থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ শনিবার তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে মেয়েটির স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

জেলার গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখের আহমেদ সিদ্দিকী আজ দুপুরে মুঠোফোনে তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গৃহবধূর শরীরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১ জুন। পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরেছে গতকাল। ঘটনা জানার পরই তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলেছে। ওই নারী অভিযোগ করেছেন, ঘটনার দিন তাঁর শ্বশুর শাহাব উদ্দিন ও শাশুড়ি হাছিনা খাতুন তাঁকে চেপে ধরে রাখেন। আর গৃহবধূর স্বামী মো. শরীফ মিয়া তাঁর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

অগ্নিদগ্ধ ওই নারীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, গত কার্তিক মাসে পসরিষা ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের শাহাব উদ্দিনের ছেলে শরীফ মিয়ার সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ জামাইকে ৭৫ হাজার টাকা ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়েছেন। কিন্তু আরও যৌতুক আদায়ের জন্য শিরিনাকে নির্যাতন করতেন শরীফ।

ওই নারীর বাবা বলেন, ৬ জুন মাছিমপুর গ্রাম থেকে তিনি একটি ফোন পান। সেই ফোনদাতার মাধ্যমে তাঁর মেয়ের শরীর গুরুতরভাবে পুড়ে যাওয়ার কথা জানতে পারেন। সেদিনই তিনি বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। গিয়ে দেখতে পান, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাঁর মেয়েকে কলাপাতায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। তিনি এ অবস্থায় মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসতে চাইলে মেয়ের শাশুড়ি হাছিনা খাতুন, শ্বশুর শাহাব উদ্দিন ও জামাই শরীফ মিয়া বাধা দেন। মেয়ের চিকিৎসা তাঁরা করাবেন বলে জানান। পরে তিনি মেয়ের সঙ্গে একান্তে কথা বলে জানতে পারেন, কারা তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মেয়ের বিপদ আরও বাড়তে পারে ভেবে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। পরে এলাকা থেকে আরও লোকজন নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় তাঁর ছোট ভাইয়ের মুঠোফোনের মাধ্যমে। ওই নারী ক্ষীণ কণ্ঠে বলেন, শ্বশুর-শাশুড়ির সহায়তায় তাঁর স্বামী শরীফ তাঁর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। অসুস্থতার কারণে ওই নারীর সঙ্গে আরও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

গতকাল বিকেলে মাছিমপুর গ্রামে অবস্থিত গৃহবধূর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্বামী শরীফ মিয়া ও শ্বশুর শাহাব উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে থাকা শাশুড়ি হাছিনা খাতুনের কাছে তাঁর পুত্রবধূর শরীর কীভাবে আগুনে পুড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিরিনা নিজেই নিজের শরীরে আগুন ধরিয়েছেন। ওই সময় তিনি (শাশুড়ি) বাড়িতে ছিলেন না বলে দাবি করেন। এ সময় বাড়িতে পুলিশ ঢুকলে হাছিনা খাতুন পালাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। ওই বাড়ি থেকে শিরিনার দেবর মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গভীর রাতে মো. ফারুক নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফারুক অগ্নিদগ্ধ শিরিনাকে ‘হোমিও’ চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। মামলায় অভিযুক্ত শ্বশুর শাহাব উদ্দিন ও গৃহবধূর স্বামী শরীফ মিয়া পলাতক।