৫ মাসে ১৯০৩ জনকে কামড়

চট্টগ্রামে হঠাৎ করে কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। প্রতিদিন কুকুরে আক্রান্ত রোগী ভিড় করছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। নগর এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে কুকুরের কামড় ও আঁচড়ে আক্রান্ত হয়ে মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছেন।

উপদ্রব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দিনে ২৭ জন পর্যন্ত কুকুরে কামড়ে আক্রান্ত রোগী আসছে চিকিৎসা নিতে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৯০৩ জন এবং অন্যান্য বন্য প্রাণীর কামড়ে ৮২৪ জন চিকিৎসা নিয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতায় কুকুর নিধন করতে না পারা এবং সময়মতো টিকার আওতায় না আনার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জলাতঙ্ক রোগের আতঙ্ক ভর করছে। তাই তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে।

গত শুক্রবার বিকেল চারটা পর্যন্ত নগর এবং জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সাতজন কুকুরের কামড়ে রোগী জেনারেল হাসপাতালে আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান দিনে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন কুকুরে আক্রান্ত রোগী আসে। হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফা আকতার বলেন, ইদানীং রোগী বেশি আসছে। অনেক সময় ২০ জনের বেশি রোগীও আসে। নগর এবং জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কুকুরে আক্রান্ত রোগী আসছে।

চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে মূলত কুকুরের কামড়ের টিকা দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ দিনের মধ্যে ২৬ মে সবচেয়ে বেশি ২৭ জন রোগী আসে। ২৬ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১০১ জন লোক কুকুরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে যায় হাসপাতালটিতে।

শুক্রবার ফটিকছড়ি থেকে রাব্বি নামে তিন বছরের এক শিশুকে নিয়ে আসে অভিভাবকেরা। তাকে র‍্যাবিস ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়। র‌্যাবিস ভাইরাসের টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এ ছাড়া টিটানাস, ইআরআইজিসহ কয়েকটি ওষুধ নিয়মিত নিতে হয় কুকুরে কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুরের কামড় খেয়ে টিকা না নিলে মানুষেরও জলাতঙ্ক হয়। এ জন্য আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছর মোট ৮ হাজার ৭০৩টি র‍্যাবিস টিকা দেওয়া হয়। গত বছর ২১ হাজার ৫৮ টিকা দেওয়া হয়।

গত বছর ৬ হাজার ২৮১ জন কুকুর এবং বন্য প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে কুকুরে কামড়জনিত রোগী ৪ হাজার ৬২১ জন।

চিকিৎসক আরিফা আকতার বলেন, কামড়ের পর আক্রান্ত স্থান ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ে টিকা নেওয়া দরকার। হাসপাতাল থেকে টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কামড়ের মাধ্যমে যে ভাইরাস ঢুকেছে তার কার্যকারিতা হ্রাস করার জন্য এআরজি নামে একটি ইনজেকশন দিতে হয়। সেটি বেসরকারিভাবে কিনে নিতে হয়। ওটা কিছুটা দামি।

চিকিৎসা নিতে আসা তরুণ আইনজীবী আবু সিদ্দিক জানান, নগরের সার্সন রোড এলাকায় তাঁকেসহ তিনজনকে একটি কুকুর কামড় দেয়। আবু সিদ্দিক বলেন, টিকা বিনা মূল্যে দিলেও আরেকটি ইনজেকশন অনেক টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। প্রায় ৯০০ টাকা এই ইনজেকশনের দাম। এটি বিনা মূল্যে দিলে ভালো হতো। কুকুরের কামড়ের রোগীকে চার দফায় হাসপাতালে টিকা নিতে যেতে হয়। শুধু কুকুর নয়, বিড়াল, বানর, শিয়াল, বেজি, চিকার মাধ্যমেও জলাতঙ্ক হতে পারে। কুকুর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।

কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, সিটি করপোরেশন একসময় কুকুর নিধন কর্মসূচি চালাত। কিন্তু আদালতের নির্দেশের কারণে তা আর করা যাচ্ছে না। এরপর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় কুকুরের টিকাদানের একটি কর্মসূচি গত বছর নিয়েছিল। কিন্তু এ বছর তা হচ্ছে না। তবে কুকুরের উপদ্রব খুব বেশি আকারে বেড়েছে। কুকুরের বংশবিস্তারও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় কুকুরের টিকাদান কর্মসূচি পালিত হয়। এবার এখনো হয়নি।