দুর্গম চরে নৌযান কারখানা

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চতুর্দিকে পদ্মা নদী। সড়কপথে চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। নৌপথেই ওই চরের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এমন একটি এলাকায় চারটি স্টিলের নৌযান নির্মাণ কারখানা গড়ে উঠেছে।

ইউনিয়নটির মুন্সিকান্দি গ্রামে পদ্মা নদীর তীরে এই চারটি কারখানার অবস্থান। সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকলেও জেনারেটরের মাধ্যমে নৌযানের নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। মুন্সিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা দুলাল খান, সুমন ব্যাপারী, মোজাম্মেল ব্যাপারী ও সানা উল্লাহ ঢালী ওই চারটি কারখানায় বিনিয়োগ করেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নড়িয়ার বাঁশতলা পদ্মা নদীর তীর। এরপর ১০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে নওপাড়া ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি গ্রাম। পদ্মা নদীর তীরের ওই গ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার দিঘিরপার ইউনিয়ন।

সম্প্রতি ওই চরে গিয়ে দেখা যায়, চারটি কারখানায় সমানতালে কাজ চলছে। কেউ ঝালাই করছেন, কেউ রঙের কাজ করছেন। সামনে বর্ষা মৌসুম, তাই তাঁদের কাজের গতিও বেশি। ফরমায়েশ দেওয়া নৌযান সরবরাহ দেওয়ার তাগিদ মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে। ওই চরে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর ব্যবহার করা হয়। কারখানায় ৪০০ থেকে ৬০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নৌযান নির্মাণ করা হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে কাঁচামাল আনা হয়। চারটি কারখানায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।

মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা মনির হোসেন ব্যাপারী একটি নৌযান বানাতে দিয়েছেন দুলাল খানের কারখানায়। ৪০০ টন ধারণক্ষমতার ওই নৌযানটি বানাতে তাঁর ব্যয় করতে হচ্ছে ৩২ লাখ টাকা। কারখানার মালিক দুই মাস সময় নিয়ে নৌযানটি বানাচ্ছেন। এখন নৌযানটির রঙের কাজ চলছে।

মনির হোসেন বলেন, কারখানাটি তাঁর বাড়ির কাছাকাছি ও পদ্মা নদীর তীরে। নির্মাণকাজ সহজে তদারকি করতে পারছেন। আর এখানে অর্ডার দেওয়ার কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের চেয়ে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হচ্ছে।

>

চারটি কারখানায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন
৪০০-৫০০ টন ধারণক্ষমতার নৌযান নির্মাণ করা হয়
৪০০ টন ধারণক্ষমতার নৌযান বানাতে ৩২ লাখ টাকা লাগে

নৌযান কারখানার মালিক দুলাল খান বলেন, তিন বছর আগে এ কারখানাটি করেছেন। এখন পর্যন্ত ভালো সাড়া পাচ্ছেন। বছরে পাঁচটি নৌযান নির্মাণ করতে পারছেন। তাঁর কারখানায় ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। বিদ্যুৎ না থাকায় একটু খরচ বেশি লাগছে। বিদ্যুতের সুবিধা পেলে এখানে অনেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান করতেন। সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পেলে তাঁর কারখানাটি আরও বড় হতে পারত। কারণ, দুর্গম চর হওয়ায় এখানে কোনো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে চায় না।

নৌযান নির্মাণশ্রমিক শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জে কাজ করতাম। আমার বাড়ি এ এলাকায়। তাই এলাকার একটি কারখানায় কাজ নিয়েছি। এখানের কারখানাগুলো ভালোই চলছে।’

নওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ আজগর সোহেল মুন্সি বলেন, দুর্গম চরে কেউ বিনিয়োগ করতে চান না। এলাকার চারজন উদ্যোক্তা চারটি কারখানা স্থাপন করেছেন। তাঁদের এলাকায় সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ চলছে। আশা, করা যায় শিগগিরই বিদ্যুৎ আসবে। তখন মানুষের আরও আগ্রহ বাড়বে বিনিয়োগে।

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, নওপাড়া ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন একটি চরে শিল্পকারখানা স্থাপন করা ভালো খবর। তাঁরা চাইলে সরকার তাঁদের নানা ধরনের সহায়তা দেবে। সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি অনুরোধ করবেন শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের সঙ্গে তিনি ওই চরে বিদ্যুতের সাবস্টেশন উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। তখন উপমন্ত্রী বলেছেন, ওই চরের সঙ্গে মুন্সিগঞ্জ হয়ে ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণ প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ চালু হলে চরের মানুষের জীবন আরও সমৃদ্ধ হবে।