ফাঁকা শহরে রিকশাভাড়া দ্বিগুণ

ক্লান্ত শরীর নিয়ে রিকশায় ঘুমিয়ে পড়েন চালক। হঠাৎ বৃষ্টিতে যাতে বিড়ম্বনায় না পড়েন, সে জন্য পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিয়েছেন রিকশা। রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, সিলেট, ৯ জুন। ছবি: আনিস মাহমুদ।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে রিকশায় ঘুমিয়ে পড়েন চালক। হঠাৎ বৃষ্টিতে যাতে বিড়ম্বনায় না পড়েন, সে জন্য পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিয়েছেন রিকশা। রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, সিলেট, ৯ জুন। ছবি: আনিস মাহমুদ।

ঈদের ছুটির আমেজ এখনো শেষ হয়নি। রাস্তাঘাটও ফাঁকা। যানবাহনেরও সংকট রয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে রিকশাচালকেরা যাত্রীদের কাছে দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছেন।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, প্রতিবার ঈদের ছুটির ফাঁকে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ ধরনের অরাজকতার অবসানে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে নগরবাসীর অভিমত।

সিলেট নগরের কয়েকটি এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সিলেটের প্রায় ৯০ শতাংশ রিকশাচালকই বৃহত্তর সিলেটের বাইরের বাসিন্দা। এঁদের অধিকাংশই ঈদের সময় বাড়িতে চলে যান। ঈদের পর অনেক চালকই আরও অন্তত দুই সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে সিলেট নগরে ফেরেন। রিকশার অপ্রতুলতার সুযোগ নিয়ে শহরে থেকে যাওয়া চালকেরা এই কয় দিন তাই অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন।

গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে নগরের জিন্দাবাজার এলাকার মোড়ে এক রিকশাচালকের সঙ্গে এক যাত্রীকে বাগ্‌বিতণ্ডায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। জানা যায়, শামীমুর রহমান নামের ওই যাত্রী নগরের নাইওরপুল এলাকা থেকে জিন্দাবাজার এসেছেন। এ দূরত্বের ভাড়া ১০ টাকা। অথচ রিকশাচালক শামীমুরের কাছে ২৫ টাকা দাবি করছেন। এ নিয়েই চালক ও যাত্রীর মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। অবশেষে যাত্রী ২০ টাকা চালককে দেন।

ক্ষুব্ধ শামীমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কোনো কথা হলো? ১০ টাকার দূরত্বের ভাড়া আমাকে দ্বিগুণ দিতে হলো। ঈদের ছুটির পরপরই রিকশার সংকট থাকায় প্রতিবছরই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় নগরবাসীকে।’

শামীমুরকে নিয়ে আসা সাইফুর মিয়া নামের ওই রিকশাচালক জানান, শহর ফাঁকা। রিকশার অভাব রয়েছে। এতে অনেক যাত্রীই রিকশাচালকদের ভাড়া বেশি দেন। কিন্তু তিনি (শামীমুর) বেশি ভাড়া দিতে চাচ্ছিলেন না। এ নিয়েই তাঁর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়।

আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, জেলরোড, বারুদখানা, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুরমা মার্কেট, তালতলা, লামাবাজার, ভাতালিয়া ও রিকাবিবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নগরে অল্পসংখ্যক রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি যাতায়াত করছে। রিকশাচালকেরা দ্বিগুণ-আড়াই গুণ বেশি ভাড়া দাবি করছেন বলে নগরবাসী অভিযোগ করেছেন।

ভাতালিয়া এলাকার বাসিন্দা শামসুন্নাহার বেগম বলেন, ‘রিকশা কম। তাই চালকদের দাবি করা ভাড়ায় বাধ্য হয়েই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। কারণ, কোনো চালকই বেশি ভাড়া ছাড়া যাচ্ছেন না। রিকশাসংকটের কারণে এসব চালক উদ্দেশ্যমূলকভাবে নগরবাসীকে জিম্মি করার মতোই অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন। বিকল্প না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত টাকায় গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।’ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নাগরিক দুর্ভোগের এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখলে চালকেরা এতটা বেপরোয়া হতে পারতেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যানবাহনের স্বল্পতার কারণে রিকশাচালকেরা এমনটা করছেন। তবে ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই বাড়িতে ঈদ কাটাতে যাওয়া রিকশাচালকদের সবাই সিলেট নগরে ফিরবেন। তাঁদের ফেরার সঙ্গে সঙ্গে এ অরাজকতাও দূর হয়ে যাবে।