'বোঝাপড়া' ঠিক রাখতে বসছে ঐক্যফ্রন্ট

বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা। ফাইল ছবি
বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা। ফাইল ছবি

শপথ নেওয়া, ক্ষোভ, সমালোচনাসহ নানান দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিক ও জোট সমুন্নত রাখতে কাল জোটের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করবেন।

গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামীম প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল সোমবার বিকেল চারটায় উত্তরায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠক হবে। তিনি বলেন, এটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে। জোটের শীর্ষ নেতারাই শুধু উপস্থিত থাকবেন।

ঐক্যফ্রন্টের মধ্যকার ক্ষোভ প্রশমনে কয়েক দিন থেকেই বৈঠকের আলোচনা হচ্ছে। ঈদের পরদিন গত বৃহস্পতিবার ঈদ–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে জোটের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট ভাঙনের পথে না।  ১২ জুন তাঁরা সবাই মিলে বৈঠক করবেন বলে জানান। তিনি কৌশল ঠিক করে মাঠে নেমে ঐক্যকে আরও সুসংহত করার কথা বলেন।
তবে বৈঠকটি ১২ জুন হওয়ার কথা থাকলেও তা আগামীকাল ১০ জুন হবে বলে জানানো হয়েছে।

গত ২৪ এপ্রিল সর্বশেষ কামাল হোসেনের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হয়। সেদিন তাঁরা বেশ কিছু কর্মসূচির ঘোষণাও দেন। কিন্তু শপথের বিপক্ষে থেকেও ২৯ এপ্রিল বিএনপির পাঁচ সাংসদ শপথ নেন। গণফোরামের দুজন সদস্য এর আগে শপথ নেওয়ায় জোটের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তাঁরা। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও তখন গণফোরামের দুজনকে নিয়ে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। এ ছাড়া মোকাব্বির খানের শপথ নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণফোরামের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রোজার মাসে বিভিন্ন ইফতার অনুষ্ঠানে নেতারা একসঙ্গে হওয়া ছাড়া জোটের কোনো বৈঠক হয়নি।

বিএনপির সাংসদদের শপথ নেওয়ার পর ঐক্যফ্রন্টের বাকি শরিকদের মধ্যে আরও ক্ষোভ তৈরি হয়। জোটের নেতাদের অভিযোগ, কাউকে না জানিয়ে, কোনো আলোচনা না করেই তাঁরা শপথের সিদ্ধান্ত নেন। জোটের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শাহবাগে একটি গণজমায়েতের কথা থাকলে সেটা স্থগিত হয়ে যায়। এ ছাড়া জোটভিত্তিক আর কোনো কর্মসূচিও হয়নি।

শপথ নেওয়ার সমালোচনা ও ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় দুর্বলতা আছে জানিয়ে জোটের অন্যতম শরিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী গত ৯ মে সংবাদ সম্মেলন করে জোট ছাড়ার আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, জোটের মধ্যকার অসংগতি দূর না হলে তিনি ৮ জুন জোট ছেড়ে দেবেন। যদিও এখন পর্যন্ত তিনি জোট ছাড়ার কোনো ঘোষণা দেননি।

জোটের অসংগতি দূর করার বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না গত ১০ মে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সংকট দূর করার জন্য বিএনপিকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন এবং বিএনপির অসংগতি দূর করতে এগিয়ে আসা উচিত।

ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে রাজনীতিতে নানামুখী সমালোচনার মধ্যে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন সম্প্রতি কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলোচনা করেছেন আ স ম রবের সঙ্গে।

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন জোটের বৈঠক প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতির এই মুহূর্তকে কীভাবে বিবেচনা করা উচিত, পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী হতে পারে—এ ব্যাপারে একটি মূলনীতি হওয়া দরকার। এ ছাড়া আমরা কী করতে চাই, তা স্পষ্ট করতে হবে। মূলত এসব বিষয়ে একটা মতে পৌঁছানোর জন্যই এ আলোচনার তাগিদ।’