মাঠ ফাঁকা করতে 'ধরপাকড়' শুরুর অভিযোগ

বগুড়া-৬ আসনের নির্বাচনে মাঠ ফাঁকা করতে পুলিশের ‘ধরপাকড়’ শুরু হয়েছে। এসব ধরপাকড় বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এজেন্টদের কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে। ২৪ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচন উপলক্ষে বগুড়া শহর বিএনপি আয়োজিত তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে ধানের শীষের প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ করেন বিএনপির পক্ষ থেকে গঠিত ১৪১টি ভোটকেন্দ্র কমিটি, প্রার্থীর এজেন্ট এবং বগুড়া পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ড কমিটির নেতারা।

সভায় আসন্ন উপনির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন ধানের শীষের তৃণমূলের কর্মীরা। তাঁরা বলেন, ৩০ জুনের নির্বাচনে এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করলেও তিনি শপথ নেননি। এখন উপনির্বাচনে ভোটারদের কোনো আগ্রহ নেই। ভোটের আমেজ নেই। ধানের শীষে ভোট চাইতে গেলে নানা প্রশ্ন করছেন ভোটাররা। আবার ধানের শীষের প্রার্থী জি এম সিরাজকে ‘বহিরাগত’ প্রার্থী বলেও অপপ্রচার চালাচ্ছে প্রতিপক্ষরা। এসব কারণে ভোটারদের কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াটা হবে বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের খান্দার এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ধানের শীষের প্রার্থী এবং বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জি এম সিরাজ। প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম সাইফুল ইসলাম ও ফজলুল বারী তালুকদার।

সভায় নিজের ও পরিবারের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বগুড়া পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আবদুল গফুর। তিনি বলেন, ‘বিএনপি করার অপরাধে আমার বিরুদ্ধে ২৩টি নাশকতার মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে তিন বছর পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। আমাকে না পেয়ে ছেলেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাড়ি পুরুষশূন্য হয়ে পড়লে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হই। কারাগারে কোনো নেতা খোঁজ নেননি। জেলের ভেতরে দিনরাত শুধু হাহাকার করে কেঁদেছি।’

বগুড়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘ভোট মানেই তৃণমূলের কর্মীদের জন্য আতঙ্ক। সামনে ভোট। কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভোটের দিন কেন্দ্রে না থাকার জন্য চাপ আসছে। অথচ নেতারা কেন্দ্রে যান না, কোনো খোঁজ নেন না। নেতারা কেন্দ্রে না গেলে সরকারি দলের হুমকি আর ভোট চুরি ঠেকাবে কে?

শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরিফুর রহমান সভায় বলেন, আসন্ন উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিত করাটাই বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ভোটার উপস্থিতি যত বাড়ানো সম্ভব হবে, তত বড় ব্যবধানে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত হবে। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে হবে। ভোটারদের উৎসাহিত করতে হবে। জি এম সিরাজ যে ‘বহিরাগত’ নন, ভোটারদের কাছে গিয়ে সেই ভুল ভাঙাতে হবে।

তৃণমূল কর্মীদের প্রতি বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আকতারুজ্জামান সভায় বলেন, ‘ভোট এলে তৃণমূল নেতাদের কদর বাড়ে। প্রার্থীরা তাঁদের স্মরণ করেন। ভোট গেলে সব ভুলে যান। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ইসলামের পক্ষে ভোট করতে গিয়ে অনেক নেতা-কর্মীকে জেলে যেতে হয়েছে।’

কর্মীদের এসব বক্তব্যের জবাবে ধানের শীষের প্রার্থী জি এম সিরাজ বলেন, ‘নানা কারণে আসন্ন উপনির্বাচন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করছে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরা। বগুড়ায় বিএনপি অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। কিছু নেতার ভুলের কারণে এত দিন মিছিল নিয়ে সাতমাথায় আসতে পারিনি। শক্তি দেখাতে গিয়ে নিজের ঘরে তালা লাগিয়েছি। অথচ আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে পারিনি। এখন সব ভুলে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’