নুসরাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ

নুসরাত জাহান।
নুসরাত জাহান।

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে ২০ জুন মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রবহির্ভূত গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনকে আদালত মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ শুনানি শেষে এসব আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় প্রিজন ভ্যানে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নুসরাত হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার করা ২১ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে মামলার আসামিদের উপস্থিতি যাচাই শেষে অভিযোগপত্র সম্পর্কে বাদীর মতামত জানতে চান আদালত। বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে করা অভিযোগপত্র সম্পর্কে অনাপত্তিসূচক মতামত দেন। এর পর আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় আদালত মামলায় গ্রেপ্তার করা ২১ আসামির মধ্যে অভিযোগপত্রবহির্ভূত পাঁচ আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন এবং আদালত ২০ জুন অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য করেন। অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ছয়জনের জামিন চাওয়া হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র সম্পর্কে বাদীর আপত্তি না থাকায় আদালত চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করেছেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতি পাওয়া আসামিরা হলেন নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ, মো. আলাউদ্দিন ও শাহিদুল ইসলাম।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আওয়ামী লীগের নেতা মো. রুহুল আমিন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, প্রভাষক আফছার উদ্দিন, মাদ্রসাছাত্র ইফতেখার উদ্দিন রানা, মো. শামীম, নুর উদ্দিনসহ ছয় আসামির জামিনের আবেদন করেন। আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করেন।
মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন, হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ আব্দুল কাদের, প্রভাষক আফছার উদ্দিন, মাদ্রাসাছাত্রী কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সদ্য বিলুপ্ত সহসভাপতি রুহুল আমিন, মহিউদ্দিন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম।

মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামলাটি তদারকি করছেন।’ নোমান সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারের দাবি করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নুসরাত হত্যা মামলা ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, মামলাটি এ আদালতে বিচার্য নয়। যাঁরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছিলেন সেই পাঁচজন ছাড়া বাকি সব আসামিকে জামিন দেওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন। তাঁর মতে, মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এর আগে গত ২৮ মে ফেনীর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠাসংবলিত নথি ও অভিযোগপত্র দেন। এরপর গত ৩০ মে মামলার ধার্য তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি না করে ওই মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ১০ জুন মামলার শুনানির দিন ধার্য করেন।

সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান ওরফে রাফিকে গত ৬ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে আটজনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ও পিবিআই এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এর আগে গত ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নুসরাতকে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।