বিএনপি কার্যালয়ে তালা দিয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। তাঁরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। নয়াপল্টন, ঢাকা, ১১ জুন। ছবি: সাজিদ হোসেন
ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। তাঁরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। নয়াপল্টন, ঢাকা, ১১ জুন। ছবি: সাজিদ হোসেন

নতুন কমিটিতে নেতা হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে নির্ধারিত বয়সসীমা বাতিল করার দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দলটির ভেঙে দেওয়া কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মী বিক্ষোভ করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা কার্যালয় ঘিরে রেখেছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক নেতারা নেতা-কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

৩ জুন রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। নতুন কমিটিতে নেতা হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী যেকোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে বলে জানানো হয়।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের অক্টোবরে রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি করা হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপরও প্রায় আড়াই বছর এই কমিটি বহাল ছিল।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী যেকোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রার্থী করার বাধ্যবাধকতা বাতিলের দাবি জানান। বিলুপ্ত কমিটির এক নম্বর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। তাঁরা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কার্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান। একাধিক নেতা চিৎকার করে বলতে থাকেন, একা দুটি পদ নিয়ে কার্যালয় দখল করে বসে আছেন রিজভী। তিনি কার্যালয়কে বাড়ি বানিয়ে বসে আছেন।

বেলা আড়াইটার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ করছিলেন।

একপর্যায়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আসেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। নেতারা কার্যালয়ের পাশে দলের প্রচারসামগ্রী বিক্রির দোকানে বসতে চাইলেও তাঁরা বাধা দেন। কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ার শামসুজ্জামান দুদু ও বরকতউল্লাহ বুলু । তাঁরা নেতা–কর্মীদের দাবির কথা শুনতে চেষ্টা করেন। তবে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ‘মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

ঈদের আগে হঠাৎ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করায় ছাত্রদলের নেতাদের বড় একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ অংশটি সংগঠিত আকারে প্রতিক্রিয়া জানানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানা যায়।

বিএনপির নেতারা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া কয়েক মাস আগে শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে রাজীব ও আকরামুলের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের অনেকে শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়া পছন্দ করছিলেন না। তাঁরা গত মাসে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উদ্দেশে দেওয়া স্মারকলিপিতে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আনকোরা ছাত্রদের হাতে সংগঠনের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর মধ্যেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

গত মার্চ মাসে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন—এমন ১২ জন নেতার সমন্বয়ে সার্চ কমিটি করা হয়। তাঁরা হলেন শামসুজ্জামান, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী, আমিরুল ইসলাম খান, শফিউল বারী, আবদুল কাদির ভূঁইয়া, হাবিবুর রশীদ। এর মধ্যে এই কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল থেকে যাঁরা বাদ পড়বেন, তাঁদের অবশ্যই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।