সংসদে এসেই উত্তাপ ছড়ালেন বিএনপির রুমিন ফারহানা

রুমিন ফারহানা।
রুমিন ফারহানা।

জাতীয় সংসদের বৈঠকে যোগ দিয়ে প্রথম দিনেই উত্তাপ ছড়িয়েছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা। একাদশ সংসদ নির্বাচন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেল ও তারেক রহমানকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার সরকারি দলের সদস্যদের প্রতিবাদ, চিৎকার চেঁচামেচির মুখে পড়েন রুমিন । পরে সরকারি দলের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রুমিনের বক্তব্যের কিছু অংশ কার্যবিবরণী থেকে বাদ (এক্সপাঞ্জ) দেওয়া হবে বলে জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বিএনপির একমাত্র নারী সাংসদ রুমিন ফারহানা আজ মঙ্গলবার প্রথম সংসদ বৈঠকে অংশ নিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তাঁকে সময় দেওয়া হয় দুই মিনিট।
বক্তব্যের শুরুতে রুমিন বলেন, ‘সংসদে আজ আমার প্রথম দিন। যেকোনো রাজনীতিবিদের মতোই সংসদে আসা, সংসদে দেশের কথা, মানুষের কথা বলা আমার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি এমন একটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি যে সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।’

তাঁর এ কথার সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি দলের সদস্যরা হইচই শুরু করেন। তাঁর পুরো বক্তব্যের সময়ই হইচই চলতে থাকে। স্পিকার কয়েকবার সদস্যদের নীরব থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু হইচই চলতে থাকে। এর মধ্যেই তিনি বক্তব্য চালিয়ে যান। একপর্যায়ে সময় শেষ হলে রুমিনের মাইক বন্ধ হয়ে যায়। মাইক বন্ধ অবস্থায়ও রুমিনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
এর আগে রুমিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘যদি আপনারা টিআইবির রিপোর্ট দেখেন। যদি আপনারা বিদেশি গণমাধ্যম দেখেন। যদি আপনারা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দেখেন। যদি আপনারা নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট দেখেন, আপনারা দেখবেন- এই সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সুতরাং আমি খুশি হব যদি এই সংসদের মেয়াদ আর একদিনও না বাড়ে।’

রুমিন বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংসদে নেই। তাকে পরিকল্পিতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় ১৬ মাসের বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলার মেরিট, তার শারীরিক অবস্থা, তার সামাজিক অবস্থান, সব কিছুর বিবেচনায় তাৎক্ষণিক জামিন পাওয়ার যোগ্য। সরকারের হুমকিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন না। বিএনপির নেতাদের নামে শত শত মামলা।
পরে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, বিএনপির নারী সাংসদ তাঁর বক্তব্যে এই সংসদ ও সংসদ সদস্য ও ১৬ কোটি মানুষের প্রতি কটাক্ষ করেছেন। এই সংসদকে তিনি অনির্বাচিত এবং অবৈধ বলেছেন। অথচ তিনি নিজেই সাংসদ হিসেবে শপথ নিয়ে এর বৈধতা দিয়েছেন। তিনি রুমিনের বক্তব্যের ওই অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করার প্রস্তাব করেন।
পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, কার্য প্রণালি বিধির ৩০৭ ধারা অনুযায়ী ওই শব্দগুলো কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হবে।

এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনপির আরেক সাংসদ হারুনুর রশীদ চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি এবং সংবিধানে বিসমিল্লাহের রাহমানির রাহিমের বাংলা অর্থ সঠিকভাবে লেখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন। তিনি ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তির দায়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহর পদত্যাগও দাবি করেন। সাংসদ হারুন আরও বলেন, বলা হয় ধর্ম যার যার উৎসব সবার এটা ঠিক নয়। তাঁর বক্তব্যের সময়ও সরকারি দলের সদস্যদের হইচই করতে দেখা যায়।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী ও পীর ফজলুর রহমানও চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার ঘটনার সমালোচনা করেন। পীর ফজলুর রহমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কেনাকাটায় দুর্নীতি নিয়ে পূর্তমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন।
বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, হচ্ছে কী দেশে? কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে এত টাকা গেল কোথায়?