সেবা নিয়েছেন তিনবার, টাকা কেটেছে সাতবার

গ্রাহক রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস নিয়েছিলেন তিনবার। তাঁর ব্যালান্স থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে সাতবার। অভিযোগ করার পরও তিনি টাকা ফেরত পাননি।

এখানেই শেষ নয়, ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে না পারার বিষয়ে রবিউল ইসলাম ২৪ এপ্রিল অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট মুঠোফোন অপারেটরের কাছে। ২৮ মে পর্যন্ত নিয়মিত যোগাযোগ রেখে গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে গিয়ে বিষয়টি সুরাহা হয়নি। সবশেষে তিনি সিম নিবন্ধন বাতিল করার হুমকি দিলে অপারেটর সমস্যাটি সমাধান করে।

রবিউল ইসলাম আজ বুধবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গণশুনানিতে টাকা কেটে নেওয়া ও নিজের ভোগান্তির এ চিত্র তুলে ধরেন। ২০১৬ সালের পর এ গণশুনানির আয়োজন করে বিটিআরসি। এতে গ্রাহকের অজান্তে টাকা কেটে নেওয়া, বাণিজ্যিক খুদে বার্তা ও কল করে বিরক্ত করা, নেটওয়ার্কের নিম্নমান, দ্রুতগতির ইন্টারনেট না থাকা, গ্রামে নিম্নমানের সেবা, কলরেট ও ইন্টারনেটের দাম নিয়ে নানা অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হকের উপস্থিতিতে কর্মকর্তারা এসব অভিযোগের জবাব দেন, বিভিন্ন বিষয়ে সুরাহার পদক্ষেপের কথা জানান এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। বিটিআরসি জানায়, গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য ২৪ মে আবেদন আহ্বান করা হয়। ২০২ জন নিবন্ধন করেন। তাঁদের মোট প্রশ্ন ছিল ১ হাজার ৩১৯টি।

গণশুনানিতে উপস্থিত থেকে গ্রাহকেরা মোট ১৭টি প্রশ্ন করেন। এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে ৩০-৩৫টি প্রশ্ন আসে। বিটিআরসি জানায়, সব প্রশ্ন ও অভিযোগের সুরাহা করে ১৫-২০ দিনের মধ্যে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।

অভিযোগকারীদের একজন ছিলেন আতাউর রহমান। তিনি বলেন, তাঁর মা গ্রামে থাকেন। মায়ের ফোনটি ফিচার ফোন, স্মার্টফোন নয়। ফোনের ব্যালান্স থেকে ৪৮ টাকা কেটে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অপারেটর জানিয়েছে, ইন্টারনেটে গেম খেলার কারণে এ টাকা কাটা হয়েছে। আতাউরের প্রশ্ন, তাঁর মা কখনোই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। গেম খেলারও প্রশ্ন ওঠে না। এভাবে অসচেতন মানুষের কাছ থেকে মোবাইল অপারেটররা টাকা কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আতাউর রহমানের আরেকটি অভিযোগ হলো, নতুন সিমের সঙ্গে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস চালু করা থাকে। মোবাইল কোম্পানির অ্যাপ ব্যবহার করে সেটা চাইলেও বন্ধ করা যায় না। তিনি এর প্রতিকার চান।

একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসার চারতলার নিচে কোনো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। বাসা থেকে বেরিয়ে ধানমন্ডিতে যাওয়ার সময় প্রায়ই তাঁর কলড্রপ হয়।

মো. আবদুস সালাম নামে একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, অযাচিত কল ও খুদে বার্তার কারণে তিনি বিরক্ত। এর একটা প্রতিকার চান।

মাফি ইসলাম নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে অনলাইনে তিনি সিম রিপ্লেসমেন্টের অর্ডার দেওয়ার পর ১৯০ টাকা মাশুল নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেই সিম পাওয়া যায়নি। তিনি কল করে দেখেছেন সিমটি অন্য কেউ ব্যবহার করছেন। অথচ সেটি তাঁর বায়োমেট্রিক নিবন্ধিত সিম। এ নিয়ে তিনি অপারেটর ও বিটিআরসির কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গেছেন। অধিদপ্তর বলেছে, রবির রিটের কারণে তারা এখন আর ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

মাফি ইসলাম বলেন, ‘তাহলে আমরা কোথায় যাব?’

উম্মে কুলসুম নামের একজন গ্রাহক বলেন, এক ওয়াইম্যাক্স অপারেটর তাঁর সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু সংযোগে ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যালান্স ছিল। এ নিয়ে বিটিআরসিতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, সুরাহা হয়নি।

গ্রামে ইন্টারনেটের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরেন একজন গ্রাহক। তিনি বলেন, তিনি একজন কনটেন্ট ডেভেলপার। ফেনীর ছাগলনাইয়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তিনি ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। সেখানে থ্রি–জি তো দূরের কথা, টু–জি নেটওয়ার্কও ঠিকভাবে পাওয়া যায় না। কিন্তু তাঁর দুটি সিমে প্রায় ১২ গিগাবাইট ইন্টারনেট ছিল, যার মেয়াদ এর মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

বিটিআরসির কর্মকর্তারা প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন। কয়েকটি অভিযোগ সুরাহা না হওয়ায় তা আবার জানানোর অনুরোধ করে সুরাহার আশ্বাস দেন।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বিটিআরসি একটি গ্রাহকবান্ধব সরকারি সংস্থা হিসেবে সুপরিচিত। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির কমিশনার মো. আমিনুল হাসান, মো. রেজাউল কাদের, মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, সংস্থাটির মহাপরিচালকেরা এবং মোবাইল অপারেটর ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে এ শুনানি হওয়ায় অপারেটরদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ ছিল না।