সেই ছোট ভাইকে অব্যাহতি, ওসিকে তলব

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বড় ভাই ফজলের বদলে কয়েদি হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছোট ভাই সজল মিয়াকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। আর ভুল আসামিকে ধরার কারণে রাজশাহী নগরের শাহ্ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে ওসিকে আদালতে হাজির হয়ে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা ৩টার দিকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (প্রথম) বিচারক মো. মনসুর আলম এ আদেশ দেন।

গত ৩০ এপ্রিল সজল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তাঁর বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তাঁর বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। এ ছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তাঁর শারীরিক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়। এখন তা পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, গ্রেপ্তার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য আছে। পুলিশ ভুল করে সজলকে ফজল ভেবে গ্রেপ্তার করেছে।

আদালতের আদেশের পর সজল মিয়াকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, আদালত থেকে আদেশের অনুলিপি সেখানে পাঠানো হবে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না। তা না থাকলে সজলকে মুক্তি দেওয়া হবে।

আজ আদালত থেকে সজল হাসিমুখেই কারাগারে গেছেন। এ সময় পুলিশ তাঁর সঙ্গে গণমাধ্যমের কর্মীদের কথা বলতে দেয়নি।

ভুক্তভোগী সজল মিয়ার বাড়ি রাজশাহী নগরের ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া মহল্লায়। তাঁর বাবার নাম তোফাজ উদ্দিন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাঁর বড় ভাই সেলিম ওরফে ফজল দীর্ঘ দিন ধরেই পলাতক। তাঁর অনুপস্থিতিতেই ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট মামলার রায় হয়। সেদিন খালাস পান অন্য চার আসামি।

দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ৩০ এপ্রিল সজলকে গ্রেপ্তার করে নগরের শাহমখদুম থানা–পুলিশ। সেদিন তাঁকে ফজল হিসেবেই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গত ২৬ মে সজল তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, আসামি বড় ভাইয়ের পরিবর্তে তিনি জেল খাটছেন।

সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বলেন, ‘অপরাধী না হয়েও সজল কয়েদি হিসেবে সাজা ভোগ করেছেন। তাঁর সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। ওসির শোকজের জবাব পাওয়ার পর আদালত এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দেন, সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তারপর প্রয়োজনে মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ভুক্তভোগী সজলের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করে আদালতে আবেদন করব।’

বিনা দোষে গ্রেপ্তার করায় শাহমখদুম থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজেরে শাস্তি দাবি করেছেন সজলের ভাই মো. বাবু। তিনি বলেন, ‘সজলকে গ্রেপ্তারের পর আমরা ওসিকে অনেক বুঝিয়েছি। ওসি কোনো কথা শোনেননি। ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাসে আমাদের সন্ধ্যা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছিলেন থানায়। তারপর সকালে আসতে বলেন। আমরা আবার ভোর ৬টায় থানায় যাই। দুপুর পর্যন্ত বসিয়ে রেখে সজলকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেড় মাস ধরে আমাদের হয়রানি করা হলো। তাই ওসির শাস্তি চাই।’

জানতে চাইলে নগরের শাহ্ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, তিনি আদালতের আদেশের কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা অনেক দিন আগের মামলা। আমরা তো আর আসামিকে চিনতাম না। সাক্ষীরাই তাঁকে শনাক্ত করেছেন। গ্রেপ্তার আসামি যে ফজল, এ ব্যাপারে মামলার সাক্ষীরা নোটারি পাবলিকে এফিডেফিট করে দিয়েছেন। সেটি আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এটাই এখন আমি আদালতের কাছে ব্যাখ্যা করব।’

১ জুন প্রথম আলোতে ‘নির্দোষ ছোট ভাই কারাগারে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।