ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুলের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন

ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ মানুষ। নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১২ জুন। ছবি: শাহাদৎ হোসেন
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ মানুষ। নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১২ জুন। ছবি: শাহাদৎ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। স্মারকলিপির একটি অনুলিপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ দিকে মানববন্ধন ও অভিযোগের ঘটনায় ওই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হককে প্রত্যাহার করেছেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী ঘোষপাড়ার বাসিন্দা মনোরঞ্জন গোপ ও তাঁর ছেলে সুমন গোপ, কামারগাঁও গ্রামের মিহির দেব, উপজেলা সদরের অলি মিয়া, আলাল মিয়া প্রমুখ। বক্তারা বলেন, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের ভবনে ডিজিটাল সাইনবোর্ড রয়েছে, ‘দুর্নীতিমুক্ত উপজেলা প্রশাসন’। অথচ ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আর এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হকের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি চান তাঁরা।

স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা ছাড়া কোনো জমির খারিজ করেন না সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হক। আর কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে তিনি পাঁচগুণ টাকা আদায় করেন। অথচ বাংলাদেশ সরকার ভূমির খারিজের ফি নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। চূড়ান্ত বিএস খতিয়ান আসার পরও দাগে সামান্য ভুল থাকলেও জমির মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন তিনি। টাকা না দিলে এই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কোনো কাজ করেন না এবং কাগজপত্র আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রেখে দেন। ২০০ টাকার খাজনার চেকের জন্য তিনি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। ভিপি জমির নামজারির জন্য তাঁকে দেড় লাখ টাকা দিতে হয়। বজলুল হক এর আগে নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা ছিলেন। সেখানেও তাঁর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নবীনগরের মুক্তারামপুরের নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বজলুল হকের অনিয়মের বিরুদ্ধে ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে অভিযোগ করেন।

মানববন্ধনে ১৯৭০ সালের ২১ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের একটি দলিল দেখিয়ে সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনোরঞ্জন গোপ বলেন, ৪০ শতক জায়গার নামজারি ও জমা খারিজের জন্য ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে আবেদন করলে নায়েব বজলুল হক (ভূমি কর্মকর্তা) দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় বজলুল হক তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জায়গাটি নামজারির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালত আমাদের একটি আদেশ দিয়েছেন। আমি সেই আদেশ তামিল করেছি মাত্র। আদেশের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।’

মিহির দেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমি খারিজের জন্য ভূমি কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে খারিজ হবে না বলে জানান। ভূমি কর্মকর্তা আমার খারিজের সব কাগজপত্র অফিসের আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রেখে দেন।’ তিনি বলেন, ‘ভূমি কর্মকর্তা স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী শিবলী চৌধুরীকে দিয়ে আমাকে গুম করারও হুমকি দেন।’

নাসিরনগর বাজারের ব্যবসায়ী অলি মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বাজার ইজারার জন্য ওই ভূমি কর্মকর্তা ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি তাঁকে সেই টাকাও দিয়েছি। পরে স্থানীয় সাংসদ বাজারটি উন্মুক্ত করে দেন। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য আগের ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেও টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি।’

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে (বজলুল হক) প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করে সত্যতা পেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমি কোনো টাকা নিই না।’

সাধারণ মানুষ কেন আপনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বজলুল হক বলেন, ‘মানববন্ধন ও বিক্ষোভের বিষয়ে আমার জানা নেই।’

প্রসঙ্গত, গত ১ জুন ‘ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।