স্ত্রীর গলায় কুড়ালের কোপ, স্বামী গ্রেপ্তার

সুরুজ্জামান বকুল
সুরুজ্জামান বকুল

তিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে বাসায় আসেন পোশাকশ্রমিক নাজমা আক্তার। নাজমা তাঁর ভাই জাকিরকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘ভাই, আমরা ঠিকঠাক বাসায় পৌঁছেছি।’

ভাইয়ের সঙ্গে এই কথোপকথনের পর বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে নাজমা আক্তার ঢাকার সাভারের ভাড়া বাসায় খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়, তিন মেয়ের সামনে স্বামী সুরুজ্জামান বকুল ধারালো কুড়াল দিয়ে এক কোপে নাজমাকে খুন করেছেন। এই ঘটনায় বুধবার সাভার থানায় নাজমার বাবা আবদুল আজীজ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন।

সাভার থানা-পুলিশ নাজমা আক্তারের স্বামী সুরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে বুধবার ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে। স্ত্রী নাজমাকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন সুরুজ্জামান। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। জব্দ করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত কুড়াল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজগার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ বছর আগে নাজমা আক্তারকে বিয়ে করেন সুরুজ্জামান। তাঁদের তিন মেয়ে। পারিবারিক কলহের জের ধরে ধারালো কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে নাজমা আক্তারকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, সুরুজ্জামান আদালতকে বলেছেন, আট মাস আগে এক রাতে তাঁর স্ত্রীকে তিনি বাড়িওয়ালার ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন এ বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। এরপর বাড়িওয়ালা এবং ওই বাড়ির ব্যবস্থাপক তাঁকে ওই ভাড়া বাসা থেকে বের করে দেন। এই ঘটনার প্রায় তিন মাস পর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আপস করেন তিনি।

সুরুজ্জামান দাবি করেন, স্ত্রী নাজমা আক্তার তাঁর কথা শুনতেন না। নিজের ইচ্ছামতো চলতেন। এই ঈদের সময় তাঁর স্ত্রী ময়মনসিংহে তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যান। তিনি সাভারের ভাড়া বাসায় ছিলেন। ঈদের পরদিন তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে (ময়মনসিংহের পুটিজানা গ্রামে) বেড়াতে যান। নাজমার নতুন মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন এবং স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। স্ত্রীকে ঢাকায় না আসার জন্য অনুরোধ করেন সুরুজ্জামান। কিন্তু তাঁর কথা না শুনে নাজমা মেয়েদের নিয়ে বুধবার ঢাকায় চলে আসেন। এ দিন তিনিও ঢাকায় আসেন। বাসায় এসে দেখেন, স্ত্রী নাজমা আক্তার কাজ করছেন। নাজমা কেন ঢাকায় ফিরে এসেছেন তা জানতে চান সুরুজ্জামান। তখন নাজমা তাঁকে গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ধারালো কুড়াল দিয়ে স্ত্রীর গলায় একটি কোপ দেন। ঘটনাস্থলেই স্ত্রী মারা যান।

এই ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন সুরুজ্জামানকে আটক করে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সুরুজ্জামানাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজগার আলী প্রথম আলোকে বলেন, সুরুজ্জামান পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তবে ঠিকঠাক কাজ করতেন না। জুয়া খেলার নেশা ছিল তাঁর। নিজের ধারালো কুড়ালের কোপে স্ত্রীকে হত্যার খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে পুলিশ সুরুজ্জামানাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। স্ত্রী নাজমাকে হত্যা করার কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি।

নাজমার ভাই জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোনের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে সুরাইয়া জাহান (১৪) ও মেজ মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৩) লেখাপড়া করে। ছোট মেয়ে লামিয়ার বয়স ৪ বছর। জাকির ঠিকমতো কাজ না করায় সংসারে সব সময় অভাব অনটন লেগে থাকত। জুয়া খেলতেন সুরুজ্জামান।

হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সুরুজ্জামানের ফাঁসি দাবি করেন নাজমার ভাই জাকির হোসেন বলেন, ‘নাজমা আমার একমাত্র বোন। আমার বোনকে ও (সুরুজ্জামান) খুন করল। ওর ফাঁসি চাই।’