রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ভূমিকা ইতিবাচক

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ফাইল ছবি
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ফাইল ছবি

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জু বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠু পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তাঁর দেশ। এ ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

বুধবার বেলা ১১টায় কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। দুই দিনের সফরে ঝ্যাং জু গত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল কালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি কক্সবাজার এসেছেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। গত মঙ্গলবার বিকেলে তিনি উখিয়ার কুতুপালং ৫-ডি শিবির পরিদর্শন করেছেন। বৈঠকে তিনি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, চীনা রাষ্ট্রদূত কক্সবাজার এসেছেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীন বাংলাদেশের পক্ষে আছে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যকর করতে চীনের ভূমিকা ইতিবাচক বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

বুধবার দুপুরে চীনা রাষ্ট্রদূত রামুর হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী রাংকোর্ট বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন। বিহারের অধ্যক্ষ শ্রি জ্যোতিসেন মহাথের প্রথম আলোকে বলেন, চীনা রাষ্ট্রদূত এই বিহারে তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন। এ সময় তিনি বিহার পরিদর্শনের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। তিনি বিহারের সংস্কার কাজে চীনা সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

নাগরিকত্ব পেলেই রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে
গত মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে চীনা রাষ্ট্রদূত উখিয়ার কুতুপালং ৫-ডি শিবিরে গিয়ে কিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি কিনা চীনা রাষ্ট্রদূতের এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা বলেন, তাঁরা যেকোনো মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে প্রস্তুত আছেন। কিন্তু তাঁদের (রোহিঙ্গাদের) নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাঁদের উচ্ছেদ করা বসতভিটা ফিরিয়ে দিতে হবে। সেখানে (রাখাইনে) স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার তাতে রাজি হবে কীনা সন্দেহ। দাবি পূরণ না হলে তাঁরা ফিরে যাবে না। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চীন সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন রোহিঙ্গারা।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চীনা রাষ্ট্রদূত দুই দিনের সফরে গত মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার এসেছেনে। প্রথম দিন তিনি উখিয়ার ৫-ডি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। বুধবার সকালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে রামু বৌদ্ধপল্লি পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ঢাকায় ফিরবেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৪ জন। মিয়ানমারের অসহযোগিতার কারণে গত দুই বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না।