পৃথকভাবে মাঠে নৌকা লাঙ্গল, বিএনপির সঙ্গে নেই জামায়াত

বগুড়া-৬ (সদর) আসনের নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) সখ্য নেই। তার বদলে উভয় দলই নিজেদের ‌প্রতীক নিয়ে পৃথকভাবে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে নেই ২০–দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বুধবার দিনভর আলাদাভাবে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও প্রচারপত্র বিলি করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার তিন প্রার্থী।

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গী ছিল জাপা। এই দুটি নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনটি সমঝোতার ভিত্তিতে জাপাকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় জাপার প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি লাঙ্গল প্রতীকে ভোট করেন। ৩০ ডিসেম্বরের ওই নির্বাচনে লাঙ্গলের পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় ছিল না আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন জাপার প্রার্থী। মির্জা ফখরুল ইসলাম ২ লাখ ৭ হাজার ২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

মির্জা ফখরুল শপথ না নেওয়ায় শূন্য হয়ে পড়ে আসনটি। ২৪ জুন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণা জমে উঠেছে। তবে এই নির্বাচনে জাপাকে ছাড় না দিয়ে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ৪ জুন প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নৌকার প্রার্থী টি জামান নিকেতার পক্ষে মাঠে নেমেছে দলটি। মহাজোটের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ইতিমধ্যে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে।

গতকাল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টি জামান নিকেতা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে শহরের সাতমাথা, নিউমার্কেট, চুড়িপট্টি এলাকায় গণসংযোগ ও ভোটারদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও মিছিল হয়েছে। এ সময় প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খাদিজা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক নিগার সুলতানা, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডালিয়া নাসরিন প্রমুখ। তাঁরা এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট চান। পরে সন্ধ্যায় নৌকার পক্ষে শহরে মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।

 প্রার্থী টি জামান নিকেতা বলেন, পরপর দুটি নির্বাচনে এখানে নৌকার প্রার্থী ছিলেন না। এতে ভোটাররা নাখোশ ছিলেন। তরুণ ভোটাররা হতাশ ছিলেন। এবারের ভোটে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। বগুড়াবাসীর অবজ্ঞা, অসম্মান আর বঞ্চনার প্রতিশোধের এই ভোট। চারদিকে এখন নৌকার জয়জয়কার। জাপার ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ চিন্তিত নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে আওয়ামী লীগ যা–ই বলুক, দলটিকে ছাড় দিতে নারাজ জোটের শরিক জাপা। দলটির একক প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমর শক্তভাবে মাঠে আছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চেয়ে নির্বাচনী মাঠে জমজমাট প্রচারণা চালাচ্ছে জাপা। গতকাল শহরের বিভিন্ন এলাকায় লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি করেন প্রার্থী নূরুল ইসলাম।

নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পাঁচ বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এ কারণে ভোটারদের সমর্থন রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভোটের মাঠে ছিলেন ওপরে ওপরে। বাস্তবে তাঁরা লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করেননি। ফলে পরাজয় হয়েছিল। জাপাকে ছেড়ে দেওয়া আসনে এবার নৌকার প্রার্থী দেওয়ায় আমরা হতাশ। এ কারণে জাপা এককভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে।’

এদিকে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে ছিল জামায়াত। তবে ভোটের মাঠে তেমন একটা ছিল না। আর এবারের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে নেই জোটের এই শরিক দল। বিএনপির প্রার্থী ও দলের সাবেক সাংসদ জি এম সিরাজ গতকাল সকাল থেকে ধানের শীষে ভোট চেয়ে শহরের নামাজগড়, বাদুরতলা, গোয়ালগাড়ি, হাকিড় মোড়, কাটনারপাড়া এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির দুই সদস্য রেজাউল করিম ও আলী আজগর তালুকদারের পাশাপাশি জেলা বিএনপির নেতারা। তবে সেখানে দেখা যায়নি জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীকে। জামায়াতের একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার তাঁদের নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।

ধানের শীষের প্রার্থী জি এম সিরাজ গতকাল বিকেলে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের নামে জাতির সঙ্গে তামাশা হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মী, পুলিশ ও ভোটকর্তাদের কাজে লাগিয়ে মধ্যরাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরানো হয়েছে। তবে বগুড়া-৬ আসনে ধানের শীষের পক্ষে বিপুল গণজোয়ারের কারণে বিএনপি দেড় লাখ ভোটে জিতেছিল। এখন জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনে নানাভাবে সরকারি দল প্রভাব বিস্তার করছে। নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে, ধানের শীষের প্রচারণায় হামলা চালিয়ে, দলীয় নেতা-কর্মীদের তালিকা করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।