নির্দিষ্ট চক্রে চলছে না চক্রাকার বাস

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।

উত্তরায় চক্রাকার বাস সেবায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্ধারিত রুটম্যাপ মানছে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি)। সদ্য চালু হওয়া এই সেবায় যাত্রী পরিবহনের দুটি পৃথক রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যাত্রী কম থাকাসহ নানান অজুহাতে নির্ধারিত রুট দুটির কোনোটিই সঠিকভাবে অনুসরণ করেছে না বিআরটিসি।

গত ২৭ মে চক্রাকার বাস সার্ভিসের উদ্বোধনের দিনেই উত্তরা এলাকায় দুটি রুট নির্ধারণ করে রুটম্যাপ করে দিয়েছিল ডিএনসিসি। এর একটি হলো আলাওল অ্যাভিনিউর পূর্ব প্রান্ত থেকে হাউস বিল্ডিং, খালপাড় হয়ে উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্টের কার্যালয় পর্যন্ত। অন্যটি বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিমে থাকা বিভিন্ন সেক্টরের ভেতর দিয়ে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর স্লুইসগেট পর্যন্ত।

গতকাল বুধবার বিআরটিসির বাসগুলোকে বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সোজা হাউস বিল্ডিং গিয়ে সোনারগাঁও জনপথ দিয়ে ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড় হয়ে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত গন্তব্যে চলাচল করতে দেখা গেছে।

নির্ধারিত রুট দুটি অনুসরণ না করার পেছনে পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়া প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিআরটিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। তবে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, চক্রাকার বাসের রুট যথাযথ অনুসরণ না করলে এই সেবা চালুর মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।

অন্যদিকে, ডিএনসিসির তৈরি মানচিত্রে নির্ধারিত স্টপেজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও বাস না পাওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। তাঁরা বলছেন, যে পথ দিয়ে বাস আসার কথা, সেদিক দিয়ে বাস আসে না। চক্রাকার বাসের কোনো টিকিট কাউন্টারও নেই।

চক্রাকার বাসের উদ্বোধনস্থল রবীন্দ্রসরণির লাবাম্বার মোড়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের গরীব-এ–নেওয়াজ সড়কে যাব। বিমানবন্দর থেকে আসা বাসগুলো এই পথ দিয়েই যাওয়ার কথা। কিন্তু ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাচ্ছি না।’

রুটম্যাপ অনুযায়ী উত্তরা আলাওল অ্যাভিনিউর পূর্ব প্রান্তে একটি রুটের এক পাশের শেষ গন্তব্য। কিন্তু গতকাল সারা দিনে সেখানে বিআরটিসির একটি বাসও যেতে দেখেননি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

জোয়ারসাহারা বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক মসিউজ্জামান বলেন, নির্ধারিত রুট অনুসরণ না করার বিষয়টি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রুট পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের ভাষ্য, নির্ধারিত দুটি রুটে পর্যাপ্ত যাত্রী নেই। এই অবস্থায় বাস চালালে আর্থিক লোকসান হবে।

রুট মেনে না চলার অন্য কারণগুলোর মধ্যে মূল রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, লেগুনা, হিউম্যান হলার প্রভৃতি যানের অবাধ চলাচল। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা রাস্তা, রাস্তার ওপরে কাঁচা সবজির বাজার, ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ অবৈধ দখলদারের কারণে গাড়ি চালাতে এবং মোড়ে গাড়ি ঘোরানোতে সমস্যা হয়।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতামত, গবেষণা এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করেই গাড়ি চলাচলের জন্য ওই দুটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্ধারিত রুটের বাইরে গাড়ি পরিচালনার বিষয়ে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু জানায়নি। তিনি বলেন, চক্রাকার বাস চালুর মূল উদ্দেশ্যই ছিল, সেক্টরের ভেতরে সংক্ষিপ্ত গন্তব্যের যাত্রীরা যাতে রিকশা, লেগুনা প্রভৃতির বদলে বাস ব্যবহারে উৎসাহী হয়। যাত্রী না পাওয়ার অজুহাতে রুট বদলে ফেললে সেই উদ্দেশ্যটাই কোনো দিন বাস্তবায়িত হবে না। ঈদের আগে এবং রমজানের কারণে যাত্রী কম হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত নির্ধারিত রুটেই বাস চলাচল নিশ্চিত করা হবে।