ছয় বছরেও সংস্কার হয়নি সড়ক

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম চৌরাস্তা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় পর্যন্ত সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে খানাখন্দ হয়েছে। বৃষ্টি হলে জমে পানি। গত রোববার পৌর শহরের মেডিসিন পয়েন্টের সামনে।  ছবি: প্রথম আলো
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম চৌরাস্তা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় পর্যন্ত সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে খানাখন্দ হয়েছে। বৃষ্টি হলে জমে পানি। গত রোববার পৌর শহরের মেডিসিন পয়েন্টের সামনে। ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম চৌরাস্তা-পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে গেছে। বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। সামান্য বৃষ্টি পড়লেই এসব খানাখন্দ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। তখন হেঁটে চলাচলও মুশকিল হয়ে পড়ে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ছয় বছর আগে নির্মাণের পর থেকে সড়কটি একবারও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হয়নি। মাঝেমধ্যে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়। তবে তা টেকে না। পাশে নালা না থাকায় সড়কটি দ্রুত বেহাল হয়ে পড়ে।

পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কসিরুল আলম বলেন, ‘পৌরসভা থেকে রাস্তাটি সংস্কারের ইচ্ছা থাকলেও সড়কটি এলজিইডির হওয়ায় কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে পারছি না। কিন্তু পথচারী এত কিছু বুঝতে চায় না। তারা চোখ বন্ধ করে আমাকে গালিগালাজ করে। এ জন্য ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে আমার ইটের ভাটার কিছু রাবিশ এনে গর্তে ফেলেছি।’

সড়কটি দিয়ে বৈরচুনা, জাবরহাট, দৌলতপুর ও সেনগাঁও ইউনিয়নের ৩০ থেকে ৩৫টি গ্রামের মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াত করে। ভারতের সীমান্তবর্তী অষ্টপ্রহর, জাবরহাট, কর্ণাই, গোদাগাড়ী, চৌরঙ্গী, বালুবাড়ী, বৈরচুনা, চন্দরিয়া ও বলাইহাটসহ ২০ থেকে ২২টি ব্যবসাকেন্দ্র ও বাজারের ব্যবসায়ীদের এ পথে উপজেলা সদর থেকে মালামাল আনতে হয়।

পীরগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. সমসের আলী বলেন, পীরগঞ্জের রঘুনাথপুর এলাকায় পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। কয়েক শ শিক্ষার্থীকে ওই ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। গ্রাম থেকে ধান, গমসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য নিয়ে অনেক ট্রাক-ট্রাক্টরকে এ সড়ক দিয়ে পীরগঞ্জ পৌর শহরে ঢুকতে হয়। কিন্তু রাস্তাটি সংস্কারের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ খুব উদাসীন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও স্থানীয় লোকজন সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সড়কটি পাকা করা হয়। এরপর আর এ সড়কে হাত দেওয়া হয়নি। গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘পশ্চিম চৌরাস্তা-শিমুলতলা সড়ক; এক কিলোমিটারের জন্য...’ শিরোনামে সচিত্র সংবাদ ছাপা হয়। এরপর এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বরে সড়কটির ভাঙা অংশ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। তবে ইট-পাথরের বদলে সেখানে ইট ও মাটির গুঁড়া ফেলা হয়। তিন–চার মাসের মধ্যেই এসব উঠে গিয়ে সড়কটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।

উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান গতকাল সোমবার বলেন, প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পীরগঞ্জ পশ্চিম চৌরাস্তা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় হয়ে গোদাগাড়ী হাট পর্যন্ত রাস্তাটি পাকা করা হয়। এরপর এ সড়ক আর মেরামত করা হয়নি। সড়কটি সংস্কার করা ছাড়া বিকল্প নেই।

গতকাল সোমবার দুপুরে দেখা যায়, হাজীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে, সরকারপাড়া তেমাথা মোড়সহ পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় পর্যন্ত সড়কে পিচ ও খোয়া উঠে গেছে। এসব স্থানে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এসব খানাখন্দে জমে আছে পানি।

এ সময় সরকারপাড়া মোড়ের ব্যবসায়ী মাহবুব আলম বলেন, রাস্তার এ অবস্থা হওয়ার কারণে তাঁর দোকানে গ্রাহক আসতে পারেন না। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ।

একই ধরনের কথা বলেন রাস্তার পাশের আরও চার-পাঁচজন দোকানদার।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর থেকেই শুনছি রাস্তাটা সংস্কার করা হবে। তা না হয়ে ভাঙা অংশে ইটভাটার রাবিশ (গুঁড়া) ফেলা হয়। চার মাস আগেই সেসব উঠে গেছে। ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে রাস্তায় আবার রাবিশ ফেলা হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে সেসব একাকার হয়ে গেছে। দেখে ভাবা যায় না, রাস্তাটার কোনো কর্তৃপক্ষ আছে।’

জানতে চাইলে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, পীরগঞ্জ পশ্চিম চৌরাস্তা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ হয়ে গোদাগাড়ী পর্যন্ত আট কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কটি পাকা করা হবে। এ লক্ষ্যে এলজিইডির মাধ্যমে পল্লী সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (আরসিআইপি) বরাবর আট কোটি টাকার প্রস্তাব গত বছরের জুলাইয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো সেটির অনুমোদন পাওয়া যায়নি।