মিডিয়ার মালিকেরা কত টাকা ঋণ শোধ দেননি জানতে চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১৪ জুন। ছবি: ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১৪ জুন। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কোন মালিক কোন ব্যাংকের কত টাকা ঋণ নিয়ে কত টাকা শোধ দেননি বা খেলাপি হয়েছেন, সেটি বের করলে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া লাগবে না। বাজেট–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে খেলাপি ঋণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকেরা কত টাকা ঋণ নিয়েছেন, সেটির একটি হিসাব নেওয়া হবে এবং তাঁদের টাকাটা শোধ দিয়ে তাঁদের পত্রিকায় লেখেন, এটি আমার অনুরোধ থাকবে।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেট–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে তিনি বাজেটের বিভিন্ন দিক এবং সরকারের পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। পরে বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাঁরা এখানে পত্রিকায় কাজ করেন, তাঁদের একটি কথা জিজ্ঞেস করব, আপনারা কি একটি খবর নেবেন যে আপনাদের পত্রিকার মালিকেরা কে কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন এবং শোধ দিয়েছেন কি না? আপনারা দয়া করে সব ব্যাংক থেকে এই তথ্যটি বের করেন, যত মিডিয়া এখানে আছেন, যত পত্রিকা...প্রত্যেকেই বলবেন (মালিকদের) যে এটা আমি অনুরোধ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের সুদের হার অনেক বেশি। যেহেতু চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হয়। আরেকটি বিষয় রয়ে গেছে, যখন হিসাব দেওয়া হয় তখন চক্রবৃদ্ধি হারে সেটি ধরে হিসাব দেওয়া হয়। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বড় দেখায়।’

বাজেট নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে, যাদের একটি মানসিক অসুস্থতা থাকে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। আপনি যত ভালো কাজই করেন, তারা কোনো কিছু ভালো খুঁজে পায় না।’ তিনি আরও বলেন, যখন দেশে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়, তখন তারা কোনো কিছুই ভালো দেখে না। সবকিছুতেই কিন্তু খোঁজে। তারপরও তাদের একটা কিছু বলতে হবে। তো সেটা ভালো। এত সমালোচনা করেও আবার বলবে—আমরা কথা বলতে পারি না। এ রোগটাও আছে। এটা অনেকটা অসুস্থতার মতো।

বাজেটের সমালোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, আমার সাধারণ জনগণ খুশি কি না। সাধারণ মানুষ খুশি কি না। সাধারণ মানুষের ভালো করতে পারছি কি না। এটা হচ্ছে বড় কথা। সাধারণ মানুষ এই বাজেটে খুশি কি না, বাজেটে তাদের উপকার হচ্ছে কি না—সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন বাইরে গেলে আগে যারা মনে করত আমরা ভিক্ষুকের জাত হিসেবে যাচ্ছি, এখন আর কেউ তা মনে করে না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় অর্জন।’ তিনি বলেন, ‘যারা সমালোচনা করার তারা করে যাক, ভালো কথা বললে আমরা গ্রহণ করব, মন্দ কথা বললে আমরা ধর্তব্যে নেব না। পরিষ্কার কথা।’

ব্যাংকের ঋণের সুদের বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাংকের যে সমস্যাটি, আপনারা জানেন যে আমরা সব সময় চেয়েছি, চেষ্টা করেছি যেন সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। সিঙ্গেল ডিজিটে রাখার জন্য আমরা কিছু সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেটা মানেনি। এবার বাজেটে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের এই নিয়মটা মেনে চলতে হবে, যেন ঋণটা সিঙ্গেল ডিজিটে হয়। তাহলে বিনিয়োগ বাড়বে। কারণ এত বেশি চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়তে থাকলে মানুষ ব্যবসা করতে পারে না। সে দিকটা আমরা বিশেষভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা অনেক আইন সংশোধন করব। অনেক আইন সংশোধন করতে হবে, সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আমরা চাপে নেই। এটা নিয়ে আমরা মিটিং করি। সরকারি ব্যাংক নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’

কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্যের বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধানের গুদাম নির্মাণ হচ্ছে। ধান ক্রয় করার লক্ষ্য আমরা নিয়েছি। প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। কৃষকদের নিজেদের অল্প অর্থই ব্যয় হয়। বলতে গেলে সরকারই সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে থাকে। কৃষকের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা আমরা দিয়ে থাকি। আর করেছি বলেই এত ধান উৎপাদন হয়েছে, না হলে এত ধান উৎপাদন হতো না। অতীতেও উৎপাদন হয়নি, এখনো হতো না। কৃষকদের যেটা ভালো–মন্দ, সেটা দেখা আমাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ। বেশি ধান উৎপাদন করতে পারলে কৃষক বেশি ধান বেচতে পারবে, সরকার তো ধান ক্রয় করছেই।’

তিন কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘কর্মসংস্থান তৈরির কথা আমরা বলেছি, চাকরি দেওয়ার কথা বলিনি। ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রেখেছি, শিক্ষার কথা বলেছি—প্রযুক্তি শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা। আমরা চাই যে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষিত হয়ে নিজের কাজ নিজে করা শুরু করুক। মূলত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে, আর আছে বলেই ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। ধান কাটার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না কেন? কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে বলেই ধান কাটার লোকের অভাব হচ্ছে। আমরা কর্মসংস্থানের কথা বললেই অনেকে চাকরির কথা বলেন। ১৬ কোটি মানুষকে কি চাকরি দেওয়া যায়? কোনো দেশ কি দেয়? মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে, সেই সুযোগটি তৈরি করা।’

কালোটাকা সাদা করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই অর্থ পাচার হচ্ছে, সেটা ধরা হচ্ছে এবং ধরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে যেটা হয়, কিছু অপ্রদর্শিত টাকা থাকে, হয়তো কোনো কারণে টাকা হাতে এসে যায়, যেটা কাজে লাগাতে পারে না। তখন সেই টাকাটা নানাভাবে পাচার করতে চায় বা অন্যভাবে ব্যবহার হয়, সেটি যেন করতে না পারে, সেটি বন্ধ করার জন্য এটি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। শুধু আমরা না, এর আগেও সব সরকারই দিয়েছে। আমরাও সেই সুযোগ দিয়েছি। টাকাগুলো যেন কাজে লাগে, সে জন্য আমরা সুযোগ দিচ্ছি।’