কালুখালীতে আচরণবিধি ভঙ্গের প্রতিযোগিতা!

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে টিনের বেড়া ছেয়ে ফেলা হয়েছে পোস্টারে। গত বৃহস্পতিবার কালুখালীর গান্ধিমারা বাজার এলাকায়।  ছবি: এজাজ আহম্মেদ
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে টিনের বেড়া ছেয়ে ফেলা হয়েছে পোস্টারে। গত বৃহস্পতিবার কালুখালীর গান্ধিমারা বাজার এলাকায়। ছবি: এজাজ আহম্মেদ

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের হিড়িক পড়েছে। প্রার্থীরা বিধি ভঙ্গ করে দেয়াল, যানবাহন, বিদ্যুতের খুঁটিতে পোস্টার লাগাচ্ছেন। কারও কারও নির্বাচনী শুভেচ্ছার রঙিন পোস্টার এখনো শোভা পাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে কালুখালী উপজেলা গঠিত। উপজেলা হওয়ার পর এটি কালুখালীর দ্বিতীয় নির্বাচন। ১৮ জুন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৬৭ জন। এঁদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ হাজার ৮৫৫ ও নারী ৫৭ হাজার ৯১২ জন।

 নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন কাজী সাইফুল ইসলাম, নুরে আলম সিদ্দিকী হক ও আলিউজ্জামান চৌধুরী। আওয়ামী লীগ মনোনীত সাইফুল বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। নুরে আলম সিদ্দিকী হক কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির নির্বাহী সদস্য। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা দৈনিক জনতার আদালত–এর সম্পাদক ও বাসসের জেলা প্রতিনিধি। আলিউজ্জামান চৌধুরী কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার

করা হয়।

এ ছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন মো. আবদুস সাত্তার, ফজলুল হক, দেওয়ান আরাফাত হোসেন, তনয় চক্রবর্তী শম্ভু, এনায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম এবং এ কে এম মোজাম্মেল হক। অপর দিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন শারমিন আক্তার, রেহেনা পারভীন, ডলি পারভীন ও রাশেদা ইয়াসমিন।

উপজেলা নির্বাচনের আচরণবিধির ৮–এর (৬,৭ ও ৮ উপধারা) ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রতীক ব্যবহার বা প্রদর্শনের জন্য একাধিক রং ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মুদ্রণের তারিখবিহীন কোনো পোস্টার লাগাতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দল নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত দেয়াল বা যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগাতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের গান্ধিমারা বাজার এলাকা, দুর্গাপুর, চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড, কালুখালী থানা এলাকা, রতনদিয়া বাজার, কালুখালী রেলস্টেশন, মোহনপুর বাজার, সোনালী ব্যাংক মোড়, বাংলাদেশ হাট মোড়, বোয়ালিয়া মোড়  প্রভৃতি স্থানে দেখা যায় বাড়ির দেয়াল, সীমানাপ্রাচীর, বিদ্যুতের খুঁটি প্রভৃতি স্থানে প্রার্থীদের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। রতনদিয়া বাজার এলাকায় কয়েকজন প্রার্থীর নির্বাচন ও ঈদের শুভেচ্ছার রঙিন পোস্টার শোভা পাচ্ছে। চায়ের দোকান, বাজার, রাস্তার মোড়—সব স্থানে ভোট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দুপুরে রতনদিয়া বাজারের সোনালী ব্যাংক মোড়ে প্রচারণা চালান মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী হক।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার কর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কর্মীদের দিয়ে পোস্টার লাগানো হচ্ছে। অন্য প্রার্থীদের দেয়ালে পোস্টার লাগানো দেখে হয়তোবা আমার পোস্টারও দেয়ালে লাগিয়েছে।’

আনারস প্রতীকের প্রার্থী আলিউজ্জামান চৌধুরী বলেন, পোস্টার কর্মীরা লাগিয়েছেন। তাঁদের ঝুলিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ না বুঝে বিধিমালা অমান্য করে পোস্টার লাগাতে পারেন।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল শুক্রবার কাজী সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

 জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পোস্টার লাগানোর বিষয়ে প্রার্থীদের অবহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে।