মাপজোখ হয়, সেতু আর হয় না

পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাওয়াই নদের ওপর সেতুর অভাবে সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন লোকজন। এর এক পাশ দিয়ে লোক ঢুকলে অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আশপাশের দশ গ্রামের মানুষকে এভাবে চলাচল করতে হয়। সম্প্রতি অমরখান এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাওয়াই নদের ওপর সেতুর অভাবে সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন লোকজন। এর এক পাশ দিয়ে লোক ঢুকলে অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আশপাশের দশ গ্রামের মানুষকে এভাবে চলাচল করতে হয়। সম্প্রতি অমরখান এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের বোর্ড বাজার থেকে পশ্চিমে কয়েক শ গজ সামনে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের শেষ মাথা। এরপর শুরু সাতমেরা ইউনিয়ন। এ দুটি ইউনিয়নকে ভাগ করে সাতমেরার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে চাওয়াই নদ। স্থানীয় বক্তিদের দীর্ঘদিনের দাবি, এখানে একটি সেতু হোক।

সেতু না থাকায় ওই স্থানে নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন লোকজন। আশপাশের ১০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে এর ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। গ্রামগুলো হলো খইপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, চেকরমারী, পখিলাগা, নাওয়াপাড়া, ফকিরপাড়া, ফলতাপাড়া, পেলকুজোত, ডুবানুছি ও গোয়ালঝাড়।

এসব গ্রামের শিক্ষার্থীদের অমরখানা উচ্চবিদ্যালয়, জগদল ডিগ্রি কলেজ, পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ এবং মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে যেতে হয়। অমরখানা ইউনিয়নের অমরখানা, মডেলহাট ও হাফিজাবাদ ইউনিয়ের কিছু লোকজন প্রায় প্রতিদিনই চাওয়াই নদী পার হয়ে সাতমেরা ইউনিয়নের বিভিন্ন পাথর কোয়ারিতে কাজ করতে যান।

সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘একটি সেতুর অভাবে আমার ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ অনেক কষ্টে চলাফেরা করছেন। আমরা দীর্ঘদিন এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে আসছি। এর আগে একাধিকবার রাস্তাসহ সেতু নির্মাণের জন্য মাপজোখও হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কিছু আমরা দেখিনি।’

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, শুকনো মৌসুমে সাঁকো দিয়ে চলাচল করা গেলেও ভরা বর্ষায় এ এলাকার মানুষকে স্কুল-কলেজ বা হাটবাজারে যেতে ৬ থেকে ৮ কিলোমিটার পথ ঘুরে মহাসড়কে গিয়ে উঠতে হয়। এখানে সেতু নির্মাণের দাবি নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে, কেউবা সাইকেল নিয়ে হেঁটে সাঁকো পার হচ্ছেন।

খইপাড়া এলাকার বাসিন্দা কলেজছাত্র আবু তাহের বলেন, ‘আমি পঞ্চগড় শহরের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এখন নদীতে পানি কম থাকায় সাঁকো দিয়ে কলেজে যাতায়াত করতে পারছি। বর্ষার সময় নদী ভরাট থাকলে পথ বেশি ঘুরে কলেজে যেতে হয়। এখানে সেতু নির্মাণ হলে আমাদের মতো ছাত্রছাত্রীদের অনেক উপকার হবে।’

বোর্ড বাজার এলাকার চায়ের দোকানি ও খইপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘যখন বাঁশের সাঁকো ছিল না তখন আমরা সাঁতরে নদী পার হতাম। ৯ বছর ধরে আমিসহ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে বাঁশ আর টাকা তুলে এই সাঁকো তৈরি করছি। একবার এই সাঁকোটি ভেঙে কিছু ছাত্রছাত্রী ভেসে যাচ্ছিল। তখন সাঁকোটি সংস্কারের জন্য পঞ্চগড়-১ আসনের তৎকালীন সাংসদ নাজমুল হক প্রধান চার মেট্রিক টন লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়েছিলেন। আমরা নিচে ওই অ্যাঙ্গেল দিয়ে ওপরে বাঁশের পাটাতন দিয়ে সাঁকো করেছি। এখন আবার সাঁকোটির পাটাতন ভেঙে যেতে শুরু করেছে।’

অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক গিয়াস উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, ‘২০১৫ সালে সাঁকো ভেঙে ১২ জন ছাত্রছাত্রী নদীতে পড়ে যায়। তারা ভেসে যাচ্ছিল। লোকজন তাদের উদ্ধার করে। সেখানে আমার মেয়েও ছিল।’

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রকৌশলী আতাউর রহমান বলেন, ‘চাওয়াই নদে ৮০ থেকে ৮৫ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে দুই দফায় জরিপ হয়েছে। এলজিইডির সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশাবাদী।’