মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ অনেকে জানেনই না

১৮ জুন মঙ্গলবার রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে তেমন কোনো আলোচনা নেই। অনেক গ্রামে প্রার্থীদের পোস্টারও নেই। অনেকে, বিশেষ করে নারীরা জানেনই না কবে ভোট। এ নিয়ে আগ্রহও নেই তাঁদের। অনেক পুরুষেরও ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ আজ শনি ও রোববার এই দুই দিন শুধু প্রচার চালানোর সময় বাকি রয়েছে।

ইতিমধ্যে চার ধাপে দেশের ৪৫০টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচন বর্জন করে আসছে বিএনপি।

পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টি অংশ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. মুনসুর রহমানকে। আর ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হককে।

এ নির্বাচন নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে নানা ধরনের বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হলে তারা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে এ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই।

গতকাল উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে নারী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন নিয়ে এ অনাগ্রহের বিষয়টি জানা গেছে। উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের হরিয়ান পূর্বপাড়া গ্রামে গিয়ে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনজন নারীর দেখা পাওয়া যায়। নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যেও তাঁরা একই ধরনের কথাবার্তা বলছিলেন। তাঁদের একজন বলেন, তাঁর স্বামী রাজশাহী জুট মিলে চাকরি করেন। জুট মিলের বেশির ভাগ কর্মচারীই পবা উপজেলার ভোটার। তাঁর স্বামী কর্মস্থলে গিয়ে নির্বাচনের কথা বললে শ্রমিকেরা বলেছেন, কে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তাঁ তাঁরা জানেন না। তখন তাঁর স্বামীর হাতে কোনো পোস্টার বা লিফলেট ছিল না। তিনি দেখাতেও পারেননি। আরেকজন বলেন, গ্রামের মধ্যে গেলে মেয়েরা বলছে, তারা জানেই না কিসের ভোট, কাকে ভোট দিতে হবে।

ওই তিনজন নারীনেত্রীর আরেকজন বলেন, শুধু টাকার জন্য বসে থাকলে চলবে না। ভালোবাসার জায়গা থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের ভোটের কথা জানাতে হবে। ওই আলোচনায় যুবলীগের একজন কর্মীও ছিলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের খরচ না পেলে তিনি মাঠে নামবেন না। শুধু নিজের ভোটটা দিয়ে আসবেন। তাঁর প্রত্যুত্তরে ওই নারীনেত্রী বলেন, ‘শুধু ঘরের মধ্যে বসে থাকলেই তুমি নির্বাচনের খরচ পাবে না। তোমাকে বাইরে যেতে হবে।’

পোস্টার-লিফলেট ছাড়াই নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন কি না, জানতে চাইলে এক নারীনেত্রী তাঁর ব্যাগ থেকে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুনসুর রহমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রিতা বিবির লিফলেট বের করে দেখান।

ভোটের প্রকৃত অবস্থা কী, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নারীনেত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, মনের ভেতর থেকে এই ভোট নিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও আগামী দুই দিনের মধ্যে মিছিল–মিটিং করে মাঠ গরম করে ফেলব।’

উপজেলার ঘোলহাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বেগম (৫০) জানেন না যে এ নির্বাচনে তাঁদের ভোট দিতে যেতে হবে। তিনি বলেন, কেউ ভোট চাইতেই আসেনি। কে কোন পদে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তিনি কিছুই জানে না। তাঁর স্বামী বলেছেন, মেয়েদের এ নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই।

একই গ্রামের নাসিমা বেগম (৪০) বলেন, কেউ ভোট চাইতেই আসেননি। কাকে ভোট দিতে যাবেন, কিছুই ভাবেননি। উপজেলার খড়খড়ি গ্রামটি রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার সঙ্গে লাগোয়া। এই গ্রামের রাস্তার দুই পাশে কিছু পোস্টার দেখা যায়। একটি বাড়ির ভেতর থেকে চম্পা বেগম নামের একজন গৃহবধূকে ডেকে কবে পবা উপজেলা নির্বাচন, জানতে চাইলে তিনি বাড়ির ভেতর গিয়ে আরেকজনের কাছ থেকে জেনে এসে বললেন, ১৮ জুন ভোট। প্রার্থী কারা, জানতে চাইলে তিনি শুধু একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম বলতে পারেন।