ঈদযাত্রায় ২৫৬ দুর্ঘটনা, নিহত ২৯৮

পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ২৩২টি দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ও ৮৪৯ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ২৫৬টি দুর্ঘটনায় ২৯৮ জন নিহত ও ৮৬০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আজ শনিবার সকালে নগরীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৯ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবছরের মতো এবারও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদের চেয়ে এবার রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো, নৌপথে বেশ কয়েকটি নতুন লঞ্চবহরে যুক্ত হয়েছে, রেলপথেও বেশ কয়েক জোড়া নতুন রেল ও বগি সংযুক্ত হয়েছে। এবারের ঈদের লম্বা ছুটি থাকায় জনসাধারণ আগেভাগে বাড়ি পাঠানোর সুযোগ কাজে লাগানোর কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এবারের ঈদে বিগত বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, নিহত ২৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও আহত ৪৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। এ বছর মোট সংঘটিত ২৩২টি সড়ক দুর্ঘটনার ৭৬টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ। যেখানে মোট নিহত যাত্রীর ৩০ শতাংশ এবং মোট আহত যাত্রীর ১০ শতাংশ। অন্যদিকে পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ায় ঘটনা প্রায় ৪৫ শতাংশ ঘটেছে। আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে এই দুর্ঘটনার প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩০ মে থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১১ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে ২৩২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ও ৮৪৯ জন আহত হয়েছেন। ৪০ জন চালক, ২০ জন শ্রমিক, ৬৮ জন নারী, ৩৩টি শিশু, ২৪ জন ছাত্রছাত্রী, ২ জন চিকিৎসক, ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৩ জন রাজনৈতিক নেতা, ৯১২ জন পথচারী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।

উল্লিখিত সময়ে রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৮টি, ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২টি , ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষে ১টি, ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ২টি ঘটনায় মোট ১৩ জন নিহত ও ০৩ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌপথে ১১টি ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত, ৩ জন নিখোঁজ ও ৮ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য ৪০টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, ৮টি অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা নিম্নরূপ

তারিখ সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা নিহত আহত
৩০ মে ২০১৯ ১৭ ১৫ ১৬
৩১ মে ২০১৯ ১৩ ১৩ ৩২
০১ জুন ২০১৯ ১৪ ১৫ ৩৭
০২ জুন ২০১৯ ২০ ৩০ ৮৬
০৩ জুন ২০১৯ ০৯ ১৪ ৩৭
০৪ জুন ২০১৯ ১৯ ২৬ ১০৫
০৫ জুন ২০১৯ ২২ ৩৬ ৯৩
০৬ জুন ২০১৯ ১৯ ২১ ৫৬
০৭ জুন ২০১৯ ২৩ ২৪ ১২৮
০৮ জুন ২০১৯ ২২ ২৫ ৬৯
০৯ জুন ২০১৯ ১৫ ১৩ ৯৭
১০ জুন ২০১৯ ১৮ ২০ ৫০
১১ জুন ২০১৯ ২১ ২১ ৪৩
১৩ দিনে নিহত সর্বমোট : ২৩২

সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাস, ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ মোটরসাইকেল ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, লরি, ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ অটোরিকশা, ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৪ দশমিক ৮২ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায় ও ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে—১. ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, ২. অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, ৩. মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, ৪. বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, ৫. সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা, ৬. পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য এবং ৭. মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।