বাজেট নিয়ে বিএনপির সমালোচনা গতানুগতিক: কাদের

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাজেট নিয়ে বিএনপির বিরূপ সমালোচনা মনগড়া এবং গতানুগতিক। বিএনপি ১০ বছর ধরে বাজেট সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশ করেছে, ঠিক একই মন্তব্য এবারও করেছে। এবারও এর কোনো ব্যতিক্রম আমরা লক্ষ করিনি। এটা তাঁদের নেতিবাচক রাজনীতির নেতিবাচক মনোভাবেরই প্রতিফলন।’

আজ শনিবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

বাজেট–পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী। জনগণের বিরুদ্ধে এ বাজেট দেওয়া হয়েছে। এতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়বে; জনপ্রত্যাশা পূরণ হবে না।

মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ১০ বছর ধরে বিএনপি প্রতিটি বাজেট সম্পর্কে এ ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেছে। কিন্তু প্রতিটি বাজেটই নানা সোপান অতিক্রম করে উন্নয়নশীল দেশে দেশকে পরিণত করে নিয়ে এসেছে।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপির সমালোচনা করে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে জনগণের কল্যাণে কোনো প্রস্তাব থাকলে তা সুনির্দিষ্টভাবে সংসদে উপস্থাপন করুন। যুক্তিসংগত প্রস্তাব গ্রহণের মতো উদারতা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সরকারের রয়েছে। নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবাসী ভুলে যায়নি, বিএনপি নেতারা গত ১০টি বাজেট ঘোষণার পর বাজেট নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন এবং বরাবরই বলেছেন বাজেট বাস্তবায়ন হবে না। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে—এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

ওবায়রদুল কাদের আরও বলেন, এবারও তারা একই কায়দায় অযৌক্তিকভাবে জনকল্যাণকর এই বাজেটের বিরুদ্ধে তাদের চিরাচরিত বিরোধিতার রাজনীতি শুরু করেছে। অবশ্য বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছিল। তাদের পক্ষে জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকারের দেওয়া ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেটের ব্যাপকতা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এটাই স্বাভাবিক।

এই বাজেটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন সব সময়ই চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করেছি। এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নতুন সরকার নতুন স্পিরিট নিয়ে, নতুন উদ্যম নিয়ে এই বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে।’

বাজেট সম্পর্কে জনগণের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মন্ত্রী কাদের বলেন, দেশের সর্বস্তরের জনগণ এই বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রস্তাবিত এই বাজেট বাংলাদেশের সব শ্রেণি ও পেশার জনগণের স্বপ্নপূরণের জন্য বাস্তবসম্মত ও ভারসাম্যমূলক। তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যুগোপযোগী জনকল্যাণমূলক বাজেট প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মোস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আওয়ামী লীগ মনে করে এবারের বাজেট জনকল্যাণমুখী, বাস্তবসম্মত ও ভারসাম্যমূলক বাজেট।’

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিফলন এবারের বাজেটে ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্মিত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত্তিমূলকে আরও সুদৃঢ় ও গতিশীল করতে নব-উদ্যম সৃষ্টিকারী বাজেট। যুগান্তকারী পদক্ষেপের সমাহারে পরিপুষ্ট এই বাজেট।

ইশতেহার বিষয়ে কাদের আরও বলেন, ‘এখানে আমি উল্লেখ করতে চাই, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার এক বছরের জন্য নয়। এর বিস্তৃতি ভিশন ২০২১, ২০৪১, ২১০০ সাল ও ডেলটা প্ল্যানের (বদ্বীপ পরিকল্পনা) ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে মিলিয়ে যারা আজকে বাজেট সম্পর্কে অপপ্রচার করছে, আমাদের বুঝতে হবে এই বাজেট এক বছরের জন্য। সরকারের পাঁচ বছরের জন্য বাজেট প্রণীত হয়নি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আকতার পপি প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।