নেশার টাকার জন্য গলা কেটে দুই বন্ধুকে হত্যা

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

হানিফুর রহমান (২৪), বিপ্লব চন্দ্র রায় (২৩) ও তরিকুল ইসলাম (২৭) তিন বন্ধু। তিনজনের বাড়িই দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায়। তিন বন্ধু বিভিন্ন পেশার আড়ালে মাদক ব্যবসা করতেন। সেই সঙ্গে তাঁরা ছিলেন মাদকাসক্ত। হানিফুর ও বিপ্লব প্রায়ই তরিকুলকে চাপ দিয়ে মাদকের টাকা আদায় করতেন। হানিফুরের কাছে তরিকুলের ১৮ হাজার টাকাও পাওনা ছিল। তরিকুল এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হানিফুর ও বিপ্লবকে গলা কেটে হত্যা করেন।

গত ৩০ মে ভোরে বীরগঞ্জ উপজেলার দেবীপুর গ্রামের বালাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ১৫ দিন পর গতকাল শুক্রবার পুলিশ তরিকুলকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তিনি এই হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন। আজ শনিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ আবু সায়েম।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে এসপি সৈয়দ আবু সায়েম বলেন, বিপ্লব উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের রাজেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে এবং হানিফুর একই উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের মদনপুর আমতী এলাকার আজাহার আলীর ছেলে। গ্রেপ্তার তরিকুল বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি শতগ্রাম (পালাপাড়া) এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। হানিফুর অনির্বাণ ওষুধ কোম্পানির সাবেক প্রতিনিধি এবং বিপ্লব দেবীপুর খোলা কুটি বাজারের কম্পিউটারের দোকানদার। তরিকুল একটি সেচ পাম্পের টাকা সংগ্রহকারী।

এসপি সৈয়দ আবু সায়েম বলেন, তরিকুল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হানিফুর ও বিপ্লবের সঙ্গে গত ২৯ মে দুপুর দুইটার দিকে বীরগঞ্জ থানার শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী বাজারে জড়ো হন। এরপর তিনজনই মোটরসাইকেলে করে নীলফামারীর দেবীগঞ্জ বাজারে যান। তরিকুল দেবীগঞ্জ বাজারের কামারের দোকান থেকে ৮০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো চাকু কিনে নিজের কোমরে লুকিয়ে রাখেন। তাঁরা তিনজন রাত সোয়া নয়টার দিকে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে ইয়াবা কেনেন। সেখানে দুই বোতল ফেনসিডিল সেবন করে ইয়াবা খেতে বীরগঞ্জের যদুর মোড়ের দিকে মোটরসাইকেলে করে রওনা দেন। তরিকুল মোটরসাইকেলের পেছনে বসেছিলেন। এর চালক ছিলেন হানিফুর। যদুর মোড়ে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে চাকু বের করে বিপ্লবের গলায় কয়েকটি টান দেন তরিকুল। এ সময় হানিফুর মোটরসাইকেল থামালে তাঁর গলায়ও চাকু দিয়ে কয়েকটি টান দেন তরিকুল। তখন মোটরসাইকেলসহ তিনজনই পড়ে যান। পরে তরিকুল মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরের দিন ভোরবেলা দেবীপুর খোলাভিটা এলাকার বিপ্লব ও হানিফুরের লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় হানিফুরের বড়ভাই হালিমুজ্জামান হালিম অজ্ঞাত কয়েক জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।

বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিলা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই তরিকুল পালিয়ে ছিলেন। পরে ঘটনার তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে তরিকুলের জড়িত থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।