এত ফোর টোয়েন্টি বাজেট কম আছে: মান্না

‘বিদ্যমান পরিস্থিতি: ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ছবি: প্রথম আলো
‘বিদ্যমান পরিস্থিতি: ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ছবি: প্রথম আলো

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এত ফোর টোয়েন্টি বাজেট কম আছে। সমস্ত হচ্ছে বড়লোকদের ধান্দা। ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ কিন্তু তৃতীয়।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ‘বিদ্যমান পরিস্থিতি: ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কৃষক ধান পুড়িয়ে দিচ্ছে, ধান কেনার খবর নেই। দেশের কৃষি ধ্বংস হচ্ছে, পাটশ্রমিকদের বেতন দেয় না নয় মাস ধরে, আমাদের সরকারি মিল বেতন দিতে পারে না। তারপরও বলা হচ্ছে, এই দেশ ধনী থেকে ধনী হচ্ছে। আরও বড় হচ্ছে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার লুটেরাদের প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য কালো টাকা সাদা করার সব কথা বলেছেন। আমরা কিন্তু সবাই একসঙ্গে প্রতিবাদ করছি না। দেশে স্বৈরতন্ত্র যদি ৩২ বছর পর্যন্ত চলে তখন কি করবেন। আমরা ১০ বছরেই ক্লান্ত হয়ে গেছি। ৩২ বছর পর মিশরে অভ্যুত্থান হয়েছে। সেই অর্থে ভোট ডাকাতির বয়স পাঁচ বছর। এইখানে আমাদের হতাশার জায়গা নেই। যা চলছে তা হচ্ছে সামগ্রিক গতিপ্রকৃতির একটা অংশ।’

মান্না আরও বলেন, সবার ঐক্য লাগবে। এখনো সেই সময় আছে। রাজনৈতিকভাবে রাস্তায় আন্দোলন দিয়ে হতাশা দূর করতে হবে। যদি রাজপথের আন্দোলনটা গড়ে তোলবার চেষ্টা করতাম, অনেক সুযোগ ছিল আমাদের। যারা বলেন, জনগণ বিরোধী দলের সঙ্গে নাই, তারা একেবারে ভুল কথা বলেন। যদি মানুষ সরকারি দলের সঙ্গে থাকত, তাহলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে মানুষ ভোট দিত। আওয়ামী লীগের লোকেরা নিজেরাই বলেছে, আমরা ভোট দিতে পারিনি। তাহলে এই ভোট কে করেছে। ভোট করেছে পুলিশ। এই পুলিশকে নিরপেক্ষ করা যাবে?

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, জবরদস্তি একটা শাসন আঁট ঘাট বেঁধে বসেছে। এই অপশাসনকে হটাতে একটা রীতিমতো মরণপণ লড়াই জনগণকে করতে হবে। কারণ, জনগণ বুঝে গেছে বর্তমান সরকার ক্ষমতা ছাড়বেই না। তাই ঐক্য অনিবার্য। ঐক্য তৈরির কাজ হচ্ছে, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করতে চায় সেই শ্রমিকশ্রেণির, বামপন্থী ও প্রগতিশীল প্রতিনিধিদের কর্তব্য হচ্ছে জনগণের প্রত্যেক পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেওয়া, দায় নেওয়া।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাবে না, ছাড়বে না। এত দিন বাইরে মানুষ বলছিল, স্বৈরশাসনের কথা। বাস্তবে এখন, শাসক দলের লোকেরাই সে কথা বলছে। জনগণের আন্দোলনের শক্তি যত দিন না তৈরি হবে তত দিন এই অবস্থা চলতেই থাকবে। যার যার অবস্থান থেকেই প্রতিবাদ করার এটাই সময়।

সুশাসনের জন্য সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সারা পৃথিবীতেই উগ্রবাদের উত্থান ও বর্ণবাদের বিস্তার ঘটছে যার ফলে গণতন্ত্র ক্রমান্বয়ে দূর হচ্ছে। তাই শুধু গণতন্ত্রের জন্য লড়াই নয়, অপশক্তির বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তাতে তরুণেরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। তাহলে দেশটা বদলাবে কীভাবে? এই যে হতাশা, উদ্দেশ্যহীনতা থেকে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এর সুযোগটাই নিচ্ছে সরকার। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ঐক্যবদ্ধ শক্তি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, যে প্রান্তিক জায়গায় আমরা এসেছি, তা ছাড় দিতে দিতে এসেছি। এতসবের পরেও আমরা গাঁ বাঁচিয়ে চলেছি।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।