মশার কারণে অস্থির জীবন

কিশোরগঞ্জ পৌরসভা
কিশোরগঞ্জ পৌরসভা

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দারা মশার যন্ত্রণায় অস্থির। দিনে বা রাতে কোনো সময়ই ছাড় দিচ্ছে না মশা। সব জায়গায় যেন মশার রাজত্ব। ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত নানা রোগজীবাণু।

প্রতিবছর বাজেটে পৌরসভায় মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ থাকলেও মশা নিধনের কার্যত কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না বলে পৌরবাসীর অভিযোগ। মশার উপদ্রবের জন্য পৌরসভার ভেতরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপকে দায়ী করছেন তাঁরা।

পৌরসভা সূত্র জানায়, প্রতিবছরের বাজেটে মশক/কুকুর নিধনের জন্য লাখ টাকা বরাদ্দ থাকে। তবে কুকুর নিধন না করার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকায় সেটার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রয়েছে। আর মশা নিধনের মেশিন না থাকায় এ কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের জন্য অন্তত ১২-১৪টি মশা নিধন মেশিন দরকার, সেখানে দুই–তিন বছর ধরে একটিও নেই। আগে যা ছিল, সবই নষ্ট হয়ে গেছে।

পৌরসভার শোলাকিয়া, খড়মপট্টি, উকিলপাড়া, আলোর মেলা, গাইটাল, হারুয়া, নগুয়া, বত্রিশ ও নিউটাউন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে সন্ধ্যা না নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই নেই। মশার যন্ত্রণায় অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মশারি টানিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না মশার উপদ্রব। এমনকি দিনের বেলায়ও কোনো জায়গায় মশার যন্ত্রণায় দাঁড়িয়ে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ময়লার স্তূপ জমে থাকায় সেসব জায়গা দিয়ে মশার যন্ত্রণায় হেঁটে চলাফেরা করাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়গুলোও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে মশারি ও কয়েলের দোকানে ভিড় বেড়েছে। কেউ কেউ মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাটও কিনছেন।

বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ জন পৌর বাসিন্দা বলেন, প্রতিবছর পৌরসভার বাজেটে মশক নিধনের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও সে অনুযায়ী দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যায় না। মশার প্রজনন ধ্বংসের কোনো উদ্যোগ নেই। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পৌরসভায় বিভিন্ন নালা, ঝোপঝাড়, আবর্জনার স্তূপে মশা মহামারি আকারে প্রজনন করছে। এসব স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ যদি মশা নিধনের ওষুধ ছিটাত তাহলে মশার বংশবিস্তার কিছুটা হলেও রোধ হতো। এটি না করাতেই ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত নানা রোগজীবাণু।

শহরের শোলাকিয়া এলাকার নূরজাহান, জসিম উদ্দিনসহ অন্তত ১০-১৫ জন বলেন, দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই মশার যন্ত্রণায় অস্থির তাঁরা। মশার উৎপাতে ছেলেমেয়েরা সন্ধ্যায় ঠিকমতো পড়াশোনা পর্যন্ত করতে পারে না। মশার কারণে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা বলেন, ১০-১২ বছর আগে এই শহরে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছিল। এরপর আর মনে পড়ে না। অতীতের চেয়ে মশার পরিমাণ এখন বেশি। চারদিক দিয়ে এমনভাবে মশা ঘিরে ধরে কোনো ধরনের স্প্রে, কয়েল বা মশারি টানিয়েও রেহাই পাওয়া যায় না।

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সুলতানা রাজিয়া বলেন, মশার আক্রমণ থেকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসসহ নানা মরণঘাতী রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। সে জন্য বাসাবাড়ির আঙিনা পরিষ্কারসহ যেকোনো গর্তে, ফুলের টবে, ডাবের ফেলে দেওয়া খোসা, এসি বা ফ্রিজে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।

এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া বলেন, বাজেট থাকা সত্ত্বেও মেশিনের অভাবে পৌরসভায় মশা নিধনের কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মেশিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। মেশিন আসামাত্রই পৌরসভায় মশা নিধনের কার্যক্রম যথারীতি চলবে।