চীন থেকে কার্পের পোনা আমদানি

কার্পজাতীয় মাছের জাত উন্নত করতে ৪০ বছর পর আবার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের মাছের উৎপাদন বাড়াতে সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও বিগ হেড কার্পের ৩৯ হাজার পোনা চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। এসব উন্নত জাতের সঙ্গে দেশীয় জাতের সংকরায়ণ করা হবে। এতে এ জাতীয় মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

গত বৃহস্পতিবার আমদানি হয়ে আসা মাছগুলো ঢাকার অদূরে টঙ্গীর সরকারি মৎস্য খামারে রাখা হয়েছে। এর আগে মাছ চাষের উন্নয়নে আশির দশকে প্রথমবার এ জাতীয় মাছ আমদানি করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আশির দশকে মাছ চাষের উন্নয়নের জন্য বিদেশ থেকে বেশ কয়েক প্রজাতির কিছু মাছ আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ছিল সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও বিগ হেড কার্প। কম খরচে বেশি উৎপাদন ও দাম কম হওয়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষদের কাছে এই মাছগুলো বেশ সমাদৃত হয়। তবে আমদানির প্রায় ৪০ বছর পর সেই মাছগুলোর মধ্যে আন্তপ্রজাতি সংকরায়ণ হওয়ায় মাছগুলোর চাষাবাদে গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন বেসরকারি মৎস্য খামারে তিন ধরনের কার্প একটির সঙ্গে আরেকটি মিশে যাওয়ায় মাছগুলোর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এগুলো থেকে আর আগের মতো উৎপাদন হচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যে মাছগুলো নতুন করে চাষাবাদে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্রুড ব্যাংক প্রকল্পের আওতায় চীন থেকে সিলভার কার্প, বিগ হেড কার্প এবং গ্রাস কার্প মাছের পোনা আমদানি করা হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক মো. সেরাজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও বিগ হেড কার্পের ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার আকারের ৩৯ হাজার পোনা চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। এ মাছগুলো চীন ও রাশিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আমুর নদীর।

>
  • আশির দশকে বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ আমদানি করা হয়
  • আন্তপ্রজাতি সংকরায়ণে মাছের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে
  • নতুন করে চাষাবাদে চীন থেকে কার্পজাতীয় পোনা আমদানি

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক বলেন, টঙ্গীর খামারে ১৫ দিন প্রতিপালনের পর সেগুলো আটটি বিভাগের আটটি সরকারি খামারে পাঠানো হবে। তিন বছর পর মাছগুলো প্রজননের উপযোগী (৫ কেজি আকৃতির) হলে তা সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি খামারে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আশির দশকে আমদানি করা মাছগুলো চাষাবাদে কাঙ্ক্ষিত মান আর অর্জন করা যাচ্ছে না। এ জন্য উৎপাদন বাড়াতে নতুন করে আমদানি করা হয়েছে।

সেরাজুর রহমান বলেন, এ ধরনের একটি মা মাছ তিন-চার লাখ ডিম ছাড়ে। তিনি জানান, ব্রুড ব্যাংক প্রকল্পের আওতায় ২৭টি মৎস্য খামার রয়েছে। আর সারা দেশে সরকারি খামার আছে ১৪৪টি। চীনের উশি এলাকার সরকারি মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র থেকে মাছগুলো আমদানিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের হিসাব অনুসারে, দেশে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন হয়েছে। এটা মোট মাছের উৎপাদনের ৩৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এর মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেলের মতো দামি কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৭ মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও বিগ হেড কার্পসহ এ জাতীয় মাছের উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ লাখ ৭৮ মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ।

নতুন করে এই মাছ চাষের উদ্যোগ নেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম নিয়ামুল নাসের। তিনি বলেন, এর ফলে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি সুখবর। অতিরিক্ত আমিষ জোগানোর জন্য কার্পজাতীয় মাছের ভূমিকা রয়েছে।