নিবন্ধন নিয়ে জামায়াতের আপিল পাঁচ বছর ধরে ঝুলছে

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে দলটির পক্ষ থেকে আপিল করা হয়, যা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আপিল বিভাগে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করে। পাঁচ বছর আগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে। সেটার কার্যক্রমও আর এগোয়নি।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের একাধিক আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সংগঠনের বিচার করতে হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ‘ব্যক্তি’ শব্দের পাশাপাশি ‘সংগঠন’, আরেকটি ধারায় ‘দায়’ শব্দের পাশাপাশি ‘সংগঠনের দায়’ ও অপর ধারায় ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি’র পাশাপাশি ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠন’ শব্দ প্রতিস্থাপন করা দরকার।

সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বিভিন্ন সময়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন। গত ৯ জানুয়ারি তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের খসড়া আবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।

অবশ্য এরপর পাঁচ মাস পার হয়েছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, আইনের খসড়া কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সভায় উঠবে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল শুনানিরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তদন্ত হলেও কার্যক্রম এগোয়নি

জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরে সাত ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ এনে ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। তখন তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেছিলেন, ‘তদন্তে আমরা প্রাথমিকভাবে জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে একাত্তরের নৃশংসতার জন্য অভিযুক্ত করেছি। এ জন্য আমরা তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও অবলুপ্তি চেয়েছি।’

তদন্ত সংস্থার সহ-সমন্বয়ক এম সানাউল হক গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনটি প্রধান কৌঁসুলির কাছে জমা দেওয়ার পর এর কার্যক্রম আর এগোয়নি।

>সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের বিষয়টি কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সভায় উঠবে বলে জানালেন আইনমন্ত্রী।

ওই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল বলে জানান ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত কৌঁসুলি রানা দাশগুপ্ত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তবে ট্রাইব্যুনাল আইনের অস্পষ্টতা বিদ্যমান থাকায় আজও ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের সম্ভব হয়নি।

নিবন্ধন নিয়ে আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

জামায়াতকে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দল হিসেবে জামায়াতের ওই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিবসহ ২৫ ব্যক্তি। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। তাতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন।

২০১৩ সালের ২ নভেম্বর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ও আপিল করেন, যা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এদিকে অক্টোবরে ইসি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। ফলে জামায়াত
নিজ প্র​তীকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। এ পর্যায়ে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা কম।