চোখ হারানো কিশোর আবার হাসপাতালে

কিশোর বিল্লাল হোসেন ওরফে মিলন
কিশোর বিল্লাল হোসেন ওরফে মিলন

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় মজুরি চাওয়ায় চাচাতো ভাইয়ের টেস্টারের আঘাতে চোখ হারানো কিশোর বিল্লাল হোসেন ওরফে মিলনকে (১৬) আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চোখের যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় আজ রোববার দুপুরে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসক ফরিদুল হাসান জানান, আজ দুপুরের পর কিশোর মিলনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার তার চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তখন চোখের যন্ত্রণা বাড়ার কারণ জানা যাবে।
মিলন উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের রাজাবাড়ি বানিয়াচালা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন ও জাহানারা বেগম দম্পতির ছেলে। গত ১২ এপ্রিল মিলনের চোখ নষ্ট করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালে মিলনের সঙ্গে থাকা বড় বোন নাছরিন আক্তার জানান, মিলনের চোখে চিকিৎসকেরা যে রিং পরিয়েছিলেন তা নিচে নেমে এসেছে। এ জন্য মিলনের চোখে জ্বালাপোড়া করছে। খুব যন্ত্রণা হওয়ায় তাকে আজ দুপুরে হাসপাতালে আনা হয়। মিলন এখন হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের ২ নম্বর ইউনিটের ৬ নম্বর বিছানায় ভর্তি রয়েছে।

মিলনের বাবা গিয়াস কারখানার শ্রমিক। একমাত্র ছেলে মিলন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তার ছোট চাচা মজিবর রহমানের ছেলে মামুন ডিশ লাইন সংযোগের কাজ করেন। তাঁর কাজে সহযোগিতা করত মিলন। তবে কাজের জন্য তাকে কোনো মজুরি দেওয়া হতো না। ঘটনার দিন ১২ এপ্রিল বিকেলে মামুন ফোন করে কাজের জন্য মিলনকে ডেকে নিয়ে যান। পরে মামুন ফোন করে জানান, মিলন কাজ করার সময় ভবনের ছাদ থেকে পড়ে আহত হয়েছে। তাকে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মিলনের পরিবারের সদস্যরা ছুটে গিয়ে দেখেন, তার অবস্থা খুবই খারাপ। পুরোপুরি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য মিলনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালে ১৯ দিন চিকিৎসার পর ১ মে মিলনের চেতনা ফেরে। এরপরই জানা যায় পুরো ঘটনা। মিলন আসলে পড়ে আহত হয়নি। মামুনের কাছে কাজের মজুরি চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন তিনি। একপর্যায়ে বিদ্যুতের কাজে ব্যবহৃত টেস্টার দিয়ে মিলনের ডান চোখে সজোরে আঘাত করেন। আঘাতের প্রচণ্ডতায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে মিলন। পরে তার বাঁ চোখেও আঘাত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েও মিলনের চোখ ঠিক করতে ব্যর্থ হন। এ ঘটনায় মিলনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে গত ৯ মে টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মামুন, আলামিন ও ডিশ ব্যবসায়ী কবির হোসেনকে।

২৮ মে মিলনের চাচাতো ভাই মামুন ও তাঁর সহকারী আলামিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা এখন টাঙ্গাইল জেলহাজতে রয়েছেন। ৩০ মে টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতে (২ নম্বর) মিলনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

এদিকে হুমকি ও হত্যার ভয় দেখানোর অভিযোগে ২৯ ও ৩০ মে উল্টো মিলনের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের নির্বাহী হাকিম (ক অঞ্চল) আদালতে মামলাগুলো করেন মামুনের (২৫) মা আফরোজা বেগম, আলামিনের (১৯) মা কুলছুম বেগম এবং মিলনের চাচা মো. নাজিম উদ্দিন।

আলামিনের মা কুলছুম বেগম বলেন, টাঙ্গাইল থেকে একজন যেভাবে মামলা লিখে দিয়েছেন সেভাবেই মামলা করা হয়েছে।
মিলনের চাচা নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী মর্জিনা ও মামুনের মা আফরোজা বেগম জানান, মিলনদের করা মামলায় যাতে তাঁদের কোনো ক্ষতি না হয়, এ জন্য মিলনের পরিবারের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করা হয়েছে।