পরিবহন ধর্মঘটের প্রতিবাদে সোচ্চার সিলেটের নাগরিকেরা

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস বন্ধের দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকের ডাকা ধর্মঘট প্রতিবাদে আজ রোববার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গণ অনাস্থা প্রাচীর কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস বন্ধের দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকের ডাকা ধর্মঘট প্রতিবাদে আজ রোববার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গণ অনাস্থা প্রাচীর কর্মসূচি পালন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বাস চলাচল বন্ধে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের ডাকা ধর্মঘটের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন সিলেটে বসবাসরত বিভিন্ন পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠন। আগামী ২৪ জুন পরিবহন ধর্মঘটের প্রতিবাদে আজ রোববার সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ‘গণ অনাস্থা প্রাচীর’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে একাত্ম হন সিলেট নগরের বাসিন্দাসহ ১৫টি পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠন।

কর্মসূচি চলাকালে সংহতি জানিয়ে সিলেটসহ বিভাগের চার জেলার প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিরাও একাত্মতা পোষণ করে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। অন্যথায় গণ অনাস্থা প্রাচীর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ধর্মঘট মোকাবিলা করা হবে বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

৩ জুন থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসির বাস চলাচল শুরু হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বিআরটিসির বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। ওই দিনই প্রায় ১০ ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে ধর্মঘট পালন করে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সংগঠন বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ করার দাবি জানায়। তাঁদের দাবি, হঠকারী সিদ্ধান্তে বিআরটিসি বাস চালু করায় ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী তাঁদের বাস যাত্রীহীন অবস্থার মুখে পড়ে।

পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের দাবি না মানায় গত বুধবার সিলেটে বিভাগের চার জেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে চলাচল করা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের যৌথ সভা করে আগামী ২২ জুনের মধ্যে দাবি মানার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। অন্যথায় ২৪ জুন থেকে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।

পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের এমন ঘোষণায় সিলেট ও সুনামগঞ্জজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যাত্রীসহ নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠন ধর্মঘটকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদী নানা কর্মসূচি পালন শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় আজ রোববার সিলেট নগরে বড় পরিসরে ‘গণ অনাস্থা প্রাচীর’ কর্মসূচি পালন করা হয়।

সিলেট প্রেসক্লাব ফাউন্ডেশনের সভাপতি আল-আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাবেক ছাত্রনেতা এম রশীদ আহমদ ও সঞ্জয় চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় গণ অনাস্থা প্রাচীর কর্মসূচিতে সিলেট নগরে বসবাসরত সহস্রাধিক ব্যক্তি একাত্ম হন। সিলেটে দিরাই ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, জামালগঞ্জ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, তাহিরপুর ছাত্র পরিষদ, বিশ্বম্ভরপুর ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, মধ্যনগর ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, দিরাই-শাল্লা যুব কল্যাণ পরিষদ, তাহিরপুর ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, যাত্রী কল্যাণ পরিষদসহ বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন আলাদা ব্যানার নিয়ে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান প্রকাশ করে।

এদিকে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক সজীব আলী তাদের ধর্মঘট ডাকাকে যৌক্তিক বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের দিকে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) এক বৈঠকে বলা হয়েছিল যে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করলে এক ডিপো থেকে আরেক ডিপোতে চলাচল করবে। সুনামগঞ্জে কোনো ডিপো না থাকার পরও তড়িঘড়ি করে চালু করায় তাঁরা প্রতিবাদ করছেন।

এ রকম কোনো সিদ্ধান্তের বিষয় জানা নেই উল্লেখ করে বিআরটিসি সিলেট ডিপোর ব্যবস্থাপক জুলফিকার আলী বলেন, জনভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে ঈদের আগে বিআরটিসির দুটি বাস চালু করা হয়। পরবর্তীতে ওই সড়কে আরও ছয়টি বিআরটিসির বাস নামানো হয়েছে মানুষের চাহিদার কারণে। তাঁদের ধর্মঘট ডাকা এখন জন-চাহিদার বিপক্ষে।