সীমিত পদে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় আবার কর্মী পাঠানো শুরু হবে। রয়টার্স ফাইল ছবি
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় আবার কর্মী পাঠানো শুরু হবে। রয়টার্স ফাইল ছবি

৯ মাস বন্ধ থাকার পর সীমিত পদে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। বিভিন্ন শিল্পকারখানায় জনবলের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় শূন্য পদে বিদেশি কর্মী নিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে দেশটি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শ্রমবাজার পুরোপুরি চালু হওয়ার পথ সুগম হতে পারে বলে মনে করছেন অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চক্রের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও অনিয়মের অভিযোগে গত সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়। এই চক্রে বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত ছিল। যদিও এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে বাজার চালু করতে দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। সর্বশেষ ২৯-৩০ মে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকেও শ্রমবাজার চালু নিয়ে পদ্ধতিগত আলোচনা হয়।

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কর্মী নেওয়ার বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। শ্রমবাজার পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে বৃহত্তম শ্রমবাজারটিতে আবার কর্মী পাঠানো শুরু হবে। এবার কাউকেই বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।

বৈঠকের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ বন্ধ থাকায় ৯ মাস ধরে নতুন কর্মী নেওয়া যায়নি। আবার চুক্তি নবায়ন করতে না পেরে অনেক পুরোনো বিদেশি কর্মী মালয়েশিয়া ছেড়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। কর্মী চলে যাওয়ায় দেশটির কারখানায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীদের চাপে পড়েই পুরোনো কর্মীদের ফের কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শূন্য পদের সংখ্যা জানিয়ে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে শুরু করেছে। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে মালয়েশিয়ার সরকার। চূড়ান্ত তালিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশি কর্মীরাও মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ পাবেন। তবে এ সংখ্যা কেমন হতে পারে, তা এখনই বলতে পারছে না দুই দেশের সরকার।

অবশ্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ওই বৈঠকে সীমিত আকারে বাজার চালুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। যদিও একই সময়ে মালয়েশিয়া সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।

গত ৩০ মে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী কুলা সেগারান দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা বারনামাকে জানান, শূন্য পদে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিতে আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন করে চাকরির সুযোগ দেওয়া হবে। কিছু খাতে কর্মীর স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এ প্রক্রিয়ায় নতুন করে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়বে না বলে মনে করছেন তিনি।

>
  • গত সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়
  • অনিয়মে বাংলাদেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত ছিল
  • এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • আগামী মাসে শূন্য পদে নিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে মালয়েশিয়া
  • পুরোপুরি বাজার খুলতে আরও সময় লাগবে।

অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, পুরোনো কর্মীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকায় পুরোনো চক্র (১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট) আবার সক্রিয় হওয়ার শঙ্কা আছে। মালয়েশিয়া এবার সব এজেন্সির জন্য সুযোগ উন্মুক্ত রাখছে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়টিও তারা নজরদারিতে রাখবে। তাই দেশে আবার কোনো চক্র গড়ে উঠলে বাজারটি বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চক্র ঠেকাতে মালয়েশিয়ার মতো দেশেও সরকারকে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়ার চাহিদা বুঝেই কর্মী পাঠাতে হবে। কোনোভাবেই সুযোগের অপব্যবহার করা যাবে না। যেকোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে সরকারের কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

এদিকে অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশের কর্মীদের বৈধ করার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্তত কয়েক হাজার কর্মী বাংলাদেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। কয়েক হাজার কর্মী আটক রয়েছেন পুলিশের হাতে। এ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় অন্তত ১০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছেন। অবৈধ কর্মীদের সাধারণ ক্ষমা করে দেশে ফেরার বিষয়টি দেশটির সরকার বিবেচনা করবে বলে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছে।

এশিয়ার ২০টি দেশের আঞ্চলিক সংগঠন ক্যারাম এশিয়া, মালয়েশিয়ার গবেষণা সংস্থা তানাগানিতা ও নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভ গত বুধবার জানিয়েছে, বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকাংশই নানা ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়ে ঝুঁকিতে আছেন। তাঁদের অনেকেই বৈধ কাগজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পরও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।