একসঙ্গে হাঁটল বাঁকা পা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা

বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস উপলক্ষে অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগিতায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে বের হওয়া শোভাযাত্রা।  প্রথম আলো
বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস উপলক্ষে অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগিতায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে বের হওয়া শোভাযাত্রা। প্রথম আলো

জন্মগতভাবেই তারা পেয়েছিল বাঁকা পা। হাঁটা শেখার কোনো সুযোগ ছিল না তাদের। চিকিৎসায় তাদের পায়ের স্বাভাবিক গড়ন ফিরে এসেছে। তারা হাঁটতে শিখেছে। রাজশাহীতে ‘বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস’ উপলক্ষে গতকাল রোববার এ রকম প্রায় এক শ শিশু রাস্তায় নেমেছিল এক শোভাযাত্রায়। তাদের সবার হাতে ছিল রঙিন ছাতা।

বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস (৩ জুন) উপলক্ষে গতকাল রাজশাহীতে এই শোভাযাত্রা বের করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়াক ফর লাইফ’ এই কর্মসূচির আয়োজন করে। শোভাযাত্রাটি হাসপাতালের প্রধান গেট থেকে শুরু হয়ে বহির্বিভাগের ফটকে গিয়ে শেষ হয়। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সঠিক পনসেটি চিকিৎসায়, ক্লাবফুট সম্পূর্ণ ভালো হয়’।

ওয়াক ফর লাইফ সংস্থা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিনা মূল্যে ক্লাবফুট বা মুগুর পা শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেয়। সপ্তাহে প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বহির্বিভাগের ৩২ নম্বর কক্ষে অবস্থিত ওয়াক ফর লাইফ ক্লিনিকটিতে বিনা মূল্যে এই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এ কে সামস্উদ্দিন ও সহকারী অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল হক এর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।

ওয়াক ফর লাইফ সংস্থার ক্লিনিক ম্যানেজার ও থেরাপিস্ট মেহেদী হাসান জানান, এই চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমটি দেশের ২৯ জেলায় অব্যাহত রয়েছে। ক্লাবফুট একটি জন্মগত শারীরিক সমস্যা। এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুর পায়ের পাতা ভেতরের দিকে বাঁকানো থাকে। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করালে শিশু সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪ হাজার শিশু এই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। রাজশাহীতে আমাদের উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৯৪টি শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এসব শিশু তাদের স্বাভাবিক পা ফিরে পেয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে এই সেবা দেওয়া হয়।’

উৎসবমুখর শোভাযাত্রায় ক্লাবফুট থেকে সেরে ওঠা শিশুদের সঙ্গে তাদের মা–বাবারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শিশু হাসিবুল আলমের বাবা খায়রুল আলম বলেন, তাঁর ছেলের বয়স সাত বছর। জন্ম থেকে তার দুই পা বাঁকা। তিনি ওয়াক ফর লাইফ সংস্থার পরামর্শে সাত বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন তার ছেলে বেশ ভালোই হাঁটতে পারে। তবে সামান্য সমস্যা আছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সেটাও ঠিক হয়ে যাবে।

শোভাযাত্রায় অংশ নিতে শিশু মাহিম মুবাসিরের (৯) সঙ্গে এসেছিলেন তার মা রাজিয়া বেগম। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মুবাসিরের পায়ে এই সমস্যা। প্রথম থেকেই ওয়াক ফর লাইফ সংস্থার পরামর্শে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে এসেছে।’

শোভাযাত্রার শুরুতে বক্তারা ক্লাবফুট চিকিৎসার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। তাঁরা বলেন, সব মা–বাবার ইচ্ছে থাকে তাঁদের শিশুটি সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেবে। তবে সব সময় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সম্মিলন হয় না। নবজাতক শিশুর জন্মগত ত্রুটিগুলোর মধ্যে ক্লাবফুট বা পায়ের পাতা বাঁকা সমস্যা অন্যতম। তাঁরা আরও বলেন, ক্লাবফুট নিয়ে জন্মানো কোনো শিশুকে যেন সুচিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী জীবনের শিকার না হতে হয়। বাংলাদেশে ক্লাবফুট নিয়ে জন্মানো সব শিশুকে তিন বছর বয়স পেরোনোর আগেই সঠিক পনসেটি পদ্ধতির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এটাই এ দিবস উদ্‌যাপনের মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া এই এলাকায় ক্লাবফুট নিয়ে জন্মানো সব শিশু যেন দ্রুত সুচিকিৎসা পায়, সে জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের কর্তব্য পালন করবে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটা যে ভালো হয়, তা মানুষকে জানাতে হবে।