স্বজনদের কাছে ফিরল পাচার হওয়া ছয় তরুণী

ভারতে পাচার হওয়া তরুণীদের হস্তান্তর প্রক্রিয়ার কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন দুই  পক্ষের কর্মকর্তারা।  ছবি: প্রথম আলো
ভারতে পাচার হওয়া তরুণীদের হস্তান্তর প্রক্রিয়ার কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন দুই পক্ষের কর্মকর্তারা। ছবি: প্রথম আলো

চার বছর আগে চট্টগ্রাম শহরের একটি বাড়িতে গৃহকর্মী ছিলেন খাগড়াছড়ির এক তরুণী (১৯)। বেশ কিছুদিন খবর না পেয়ে ওই বাসায় মেয়ের খোঁজ নিতে যান তাঁর মা। সেখানে প্রথমে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন খোঁজখবর না পেয়ে মায়ের সন্দেহ হলে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওই তরুণীর মা। পরে নানা সূত্রে তিনি জানতে পারেন, তাঁর মেয়েকে ভারতে পাচার করা হয়েছে। পরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি এগিয়ে আসে অসহায় ওই মাকে সাহায্য করতে। অবশেষে তাঁর মেয়ে ফিরে এসেছেন। গতকাল রোববার পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাচার হওয়া মেয়েটিকে নিতে এসেছিলেন মা।

একইভাবে প্রায় সাত বছর আগে বান্ধবীর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে নিখোঁজ হয় নড়াইল জেলার আরেক কিশোরী (১৭)। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। বছরখানেক আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের মাধ্যমে জানতে পারেন ওই কিশোরী ভারতের একটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। এরপর মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছিলেন তাঁ মা-বাবা। নড়াইল থেকে সেই মেয়েকেও নিতে এসেছেন ওই কিশোরীর মা।

গতকাল বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে বসে প্রথম আলোকে এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্নভাবে পাচার হওয়া ছয় তরুণীর স্বজনেরা।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া এই ছয় কিশোরীকে গতকাল দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সহযোগিতায় পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

পাচার হয়ে এক বছর থেকে শুরু করে সাত বছর পর্যন্ত ভারতে অবস্থান করেছে ওই ছয় তরুণী। তরুণীরা খাগড়াছড়ি, পটুয়াখালী, নড়াইল, বাগেরহাট, যশোর ও খুলনা জেলার।

গতকাল বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্তের শূন্যরেখায় বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে ওই তরুণীদের গ্রহণ করেন ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন পরে সন্তানদের ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অভিভাবকেরা। ফিরে আসা তরুণী আর তাঁদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে ইমিগ্রেশন এলাকা।

ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় কাজ শেষে তেঁতুলিয়া থানা–পুলিশ ওই তরুণীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। পরে তেঁতুলিয়া থানায় নিয়ে ওই তরুণীদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, চাকরিসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের ভারতে পাচার করা হয়েছিল। এক বছর ধরে ভারতের চেন্নাইয়ের একটি বাড়ি থেকে ওই ছয় কিশোরীকে উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ চেন্নাইয়ের একটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে হস্তান্তর করে। পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের ইমপালস
এনজিও নেটওয়ার্ক নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের এনজিও ব্র্যাকের সহযোগিতায় ওই কিশোরীদের পরিচয় ও ঠিকানা নিশ্চিত করা হয়। এক বছর চিঠি চালাচালির পর তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।

তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, ওই ছয় তরুণীকে ভারতের একটি এনজিও বাংলাদেশের একটি এনজিওর কাছে বিজিবি বিএসএফের সহযোগিতায় হস্তান্তর করে। তরুণীদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক শেখ জেনেফা খানম জব্বার বলেন, ‘পাচার হওয়া ওই ছয় তরুণীকে ফেরত আনার পর তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তাঁদের স্বজনেরাও আমাদের সঙ্গে আছেন। এখন আমরা তাঁদের আরও শারীরিক ও মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কাউন্সেলিং করব। আশা করছি, সোমবার তাঁদের স্বজনদেরসহ নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে তাঁরা যদি কোনো আইনি সহায়তা চান, তাহলে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তা দেওয়া হবে।’