জামিন আবেদন নাকচ, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আসসামস জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন।

এর আগে বেলা ২ টা ২০ মিনিটে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানির শুরুতে মামলার বাদী সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক আদালতকে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আইনের সেবক হয়েও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাননি। আদালত যেদিন তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন তারপর তিনি সরাসরি আপনার আদালতে হাজির হতে পারতেন। নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে পারতেন। কিন্তু ওসি মোয়াজ্জেম তা না করে পালিয়েছিলেন।

সৈয়দ সাইয়েদুল হক আদালতের কাছে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তা পুলিশ বাহিনীর জন্য কলঙ্ক।

জামিন আবেদন নাকচ করে আসামি সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামীম। সাবেক ওসি আসামি মোয়াজ্জেমের জামিন চান তাঁর আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ।

মোয়াজ্জেমের পক্ষে আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ আদালতকে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য তাঁর মক্কেল হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে।

ফারুক আহম্মেদ আদালতের কাছে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক ছিলেন না। পত্রিকা মারফত তিনি জানতে পারেন, তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ জন্য আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। পালিয়ে বিদেশে যাননি।

আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৩০ জুন নতুন দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

হাজতখানা থেকে এজলাসে: ওসি মোয়াজ্জেমকে গতকাল রোববার হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা-পুলিশ। আজ সকাল থেকে আদালত চত্বরে পুলিশ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা ভিড় করতে থাকেন।

প্রিজনভ্যানে করে মোয়াজ্জেমকে দুপুর সাড়ে ১২ টার পর ঢাকার আদালত চত্বরে আনা হয়। তাঁকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ২ টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোয়াজ্জেমকে হাজির করা হয়। আদালতে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সদস্য কড়া নিরাপত্তা দিয়ে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে আদালতে তোলে। মোয়াজ্জেম এ সময় মাথা নিচু করে ছিলেন। আদালতের এজলাসে তোলার পর উপস্থিত আইনজীবীরা মোয়াজ্জেমের হাতে হাতকড়া পরানোর দাবি তোলেন। এরপর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে তাঁকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। জনাকীর্ণ আদালতে তখন শুনানি শুরু হয়।

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে গত ৬ এপ্রিল পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন তাঁর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এর ১০ দিন আগে নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মে পরোয়ানা জারি করেন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। কিন্তু পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান বারবার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এর দুই দিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। তখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলেছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।

পুলিশের এই গড়িমসির সুযোগে মোয়াজ্জেম হোসেন সটকে পড়েন। এর আগে তাঁর মুঠোফোনটি সচল থাকলেও একপর্যায়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক।