এবার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা যাচাই

এবার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই–বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অমুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভুয়া কাগজপত্র ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই তালিকায় নিজেদের নাম ঢুকিয়েছেন—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বলছে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজার হতে পারে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণ ট্রাস্ট ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে। সরকার আলাদা করে যুদ্ধাহত ভাতা দেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই অবৈধভাবে যুদ্ধাহত ভাতা পাওয়ার জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা তুলছেন তাঁরা। অনেকের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্নও নেই। অনেকে অন্য দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হলেও নিজেদের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেছেন। এ জন্য জামুকার ৬২তম বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধারা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে যুদ্ধাহত ভাতা নিচ্ছেন কি না, তা যাচাই–বাছাই করতে নওঁগা-২–এর সাংসদ শহীদুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে ‘এ’ শ্রেণির ১৪ জনকে, ‘বি’ শ্রেণির ১৪৬ জনকে, ‘সি’ শ্রেণির ১ হাজার ৭০৪ জনকে এবং ‘ডি’ শ্রেণির ২ হাজার ৬৮৩ জনসহ মোট ৪ হাজার ৫৪৭ জনকে যুদ্ধাহত ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা জানান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা আবার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ভাতা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।

বর্তমানে ‘এ’ শ্রেণি (পঙ্গুত্বের হার ৯৬-১০০) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা ৪৫ হাজার টাকা করে সম্মানী পান। কল্যাণ ট্রাস্ট তাঁদের ভাতা আরও ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ‘বি’ শ্রেণির (পঙ্গুত্বের হার ৬১-৯৫) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা ৩৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। তাঁদের ভাতা ৮ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘সি’ শ্রেণির (পঙ্গুত্বের হার ২০-৬০) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ হাজার টাকা পান। তাঁদের ভাতা আরও ৬ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ‘ডি’ শ্রেণির (পঙ্গুত্বের হার ১-১৯) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা পান ২৫ হাজার টাকা। শুধু তাঁদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। কল্যাণ ট্রাস্ট বলছে, তাঁদের পঙ্গুত্ব তেমন দৃশ্যমান নয়।

>
  • বর্তমানে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান ৪ হাজার ৫৪৭ জন
  • এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নন বলে অভিযোগ উঠেছে

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, অনেক দিন ধরেই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছেন, এমন অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা অন্যদের চেয়ে ভাতা ও সুযোগ–সুবিধা অনেক বেশি পান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকজনের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছি। তবে বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর, সেহেতু আমরা একটি কমিটি করেই এ তালিকা যাচাই–বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

বর্তমানে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানী ভাতা ও বোনাস ছাড়াও দেশে ও বিদেশে (ভারত, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড) চিকিৎসা সুবিধা, কন্যার বিবাহ ভাতা, সন্তান ও নাতি–নাতনিদের বঙ্গবন্ধু বৃত্তি, শিক্ষা ভাতা, ছেলেমেয়েদের বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ, রেশন কার্ড প্রদান, পরিচয়পত্র ও বিমান চার্ট প্রদান, পানির বিল, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল মওকুফ, চলাচলের জন্য হুইলচেয়ার, ক্রাচ, লাঠি, কৃত্রিম অঙ্গ, জুতা-মোজা, শ্রবণযন্ত্র, চশমা, হুইলচেয়ারে চলাচলকারী সম্পূর্ণ পঙ্গু যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বছরে একবার কক্সবাজারে আবহাওয়া পরিবর্তন বা ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের ব্যবস্থা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত নিজস্ব বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, চিকিৎসা ও বিভিন্ন কাজে ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে এবং মাসিক ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত মোবাইল কার্ড সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পান।