থানার অস্ত্র গেল কোথায়?

দুপুরের ডিউটি শেষে শাহবাগ থানায় ফেরেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিমাংশু সাহা। থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার বিশ্রামকক্ষে পোশাক পরিবর্তন করে ঘণ্টাখানেক ঘুমানোর পর যান শৌচাগারে। ব্যবহৃত একটি পিস্তল আর কয়েকটি গুলি রাখা ছিল বিশ্রামকক্ষের বিছানার ওপরে। মিনিট পাঁচেক পর যখন ফিরে আসেন, ততক্ষণে চুরি হয়ে যায় ৭ দশমিক ৬২ চায়না মডেলের পিস্তল ও ১৬টি গুলি। সময় তখন বিকেল ৪টা বেজে ২০ মিনিট। এ ঘটনা ৫ মের।

নিরাপত্তায় ঘেরা থানা ভবনের একটি কক্ষ থেকে কীভাবে অস্ত্রগুলো খোয়া গেল, তা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এক যুবককে সন্দেহ করলেও তাঁর সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশিক্ষণ এবং আগে থেকেই পরিকল্পনা ছাড়া থানার ভেতর এসে অস্ত্র চুরির ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।

শাহবাগ থানার একটি সূত্র জানায়, অস্ত্র খোয়া যাওয়ার পর থানার সব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তাহলে অস্ত্র খোয়া গেল কীভাবে? থানার সূত্রটি বলছে, ঘটনার কাছাকাছি সময়ে পুলিশের সদস্যরা ছাড়া শুধু একজন বহিরাগত যুবক থানার ভেতর ছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কারও কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন থানা-পুলিশের সদস্যরা। এরপরও থানার ভেতরের কেউ যুবককে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কি না, সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। গাফিলতির দায়ে বরখাস্ত করা হয়েছে এএসআই হিমাংশু সাহাকে।

থানার ফটকের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ২৫-২৬ বছরের এক যুবক খয়েরি-সাদা চেক শার্ট আর কফি রঙের প্যান্ট, মুখে দাড়ি, কাঁধে কালো ব্যাগ নিয়ে ঘটনার দিন দুবার থানায় এসেছিলেন। প্রথম দফায় বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে থানার মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে দায়িত্বরত একজন কনস্টেবল গন্তব্য জানতে চাইলে উত্তরে বলেছিলেন, শৌচাগারে যাবেন। দুপুর ১২টা ৩৩ মিনিটে মূল ফটক দিয়েই বের হয়ে যান তিনি। মাঝের ৪৮ মিনিট থানার ভেতর তিনি কোথায় গিয়েছিলেন, তা ভেতরে থাকা অন্য সিসি ক্যামেরার কোনোটিতেই ধরা পড়েনি।

>
  • ২-৩ মিনিটের মধ্যে থানার ভেতরের একটি কক্ষ থেকে অস্ত্র চুরি হয়
  • অস্ত্র বহনকারী এএসআই তখন শৌচাগারে ছিলেন
  • ২৫-২৬ বছরের এক যুবক ঘটনার দিন দুবার থানায় এসেছিলেন
  • তাঁর পরনে ছিল খয়েরি-সাদা চেক শার্ট, কফি রঙের প্যান্ট, মুখে দাড়ি, কাঁধে কালো ব্যাগ

বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে থানার পেছনের মসজিদের গেট দিয়ে আবার থানায় আসেন যুবক। অস্ত্র বহনকারী এএসআই হিমাংশু তখন শৌচাগারে। যুবকটি ভেতরে ঢোকার পর এক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সূত্রটি জানায়, কথা বলার ধরন দেখে মনে হয়েছে রিকশাচালককে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করছিলেন তিনি। এরপর থানায় ঢোকার দু-তিন মিনিটের মাথায় মসজিদের গেট দিয়ে বাইরে চলে যান। এই সময়েই অস্ত্রটি চুরি হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদ গেটের সঙ্গেই থানা ভবন। জিয়া শিশুপার্কের পাশে থানার ডাম্পিং গেট দিয়ে ঢুকলে সরু পথ। যেটি দিয়ে সরাসরি থানার ভেতর প্রবেশ করা যায়। এই পথে সিসি ক্যামেরা নেই।

ঘটনার তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা জানান, দুই দফায়ই থানায় আসার সময় যুবককে মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা গেছে। এটিকে ধরেই তদন্ত এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। অস্ত্র চুরির ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই মনজুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন থানা এলাকায় ব্যবহৃত মুঠোফোনের কল তালিকা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটি পর্যালোচনা করে কোনো সূত্র পাওয়া যেতে পারে।