ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়িতে হামলা

বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থীর শহরের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ছবি: শাহাদৎ হোসেন
বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থীর শহরের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ছবি: শাহাদৎ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা লুৎফর রহমানের (ঘোড়া) বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তারা বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে জেলা শহরের হালদারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নাছিমা লুৎফর রহমান অভিযোগ করেছেন, ‘নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তানভীর ভূঁইয়া প্রতিহিংসায় সমর্থকদের দিয়ে আমার শহরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।’

তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তানভীর ভূঁইয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রতক্ষদর্শী, পুলিশ ও প্রার্থীর সমর্থকদের সূত্রে জানা গেছে, ভোট গ্রহণ চলাকালীন আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বহিরাগত নেতা–কর্মীরা বিজয়নগর উপজেলার উত্তন ইউনিয়নের বড়পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান। এ সময় তাঁরা কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল রিপন মোদককে (২৫) লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজনও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীদের প্রতিহত করেন। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি যুবলীগের কর্মী হাসান সারওয়ার ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম বিল্লাহসহ আটজন আহত হন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে প্রায় ৪০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেলা সোয়া একটার দিকে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চালু হয়।

এদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের আহতের ঘটনার পরপর বেলা আড়াইটার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা লুৎফর রহমানের শহরেরর হালাদারপাড়ার বাড়িতে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় নাছিমা লুৎফর রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া পুলিশের উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম ও সাংবাদিক মোজাম্মেল চৌধুরীর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। দুর্বৃত্তরা প্রার্থীর ১৪তলা বিশিষ্ট ভবনের নিচের গাড়ির রাখার জায়গায় পেট্রল ঢেলে দেয়। পরে সেখানে থাকা প্রার্থীর একটি ল্যান্ড ক্রুজার, একটি পাজেরো ও একটি টয়োটা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

নাছিমা লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের হেরে যাওয়ার ভয়ে তানভীর ভূঁইয়া এ হামলা চালিয়েছে। আমার বাড়িতে কেউ ছিল না। শুধু কাজের মেয়েরা ছিল। বাড়িতে আমার অনেক টাকা পয়সা এবং ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার। তারা আমার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর, তিনটি গাড়ি, মোটরসাইকেলে আগুন এবং বাড়ির নিচতলায় গাড়ির রাখার জায়গায় পেট্রল ধরিয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে।’
এ ঘটনায় তিনি মামলা করবেন বলে জানান।

তানভীর ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাছিমা লুৎফর রহমানের সঙ্গে আমার কোনো দিন কথা হয়নি। তাঁকে আমি এখনো দেখিনি। আমার ছেলে, মেয়ে, পরিবারসহ উপজেলায় আছি।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নাছিমা লুৎফর রহমান কালোটাকা ছেড়েছে। তার গুন্ডাবাহিনীর হামলায় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আহত হন। ছাত্রলীগ কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা করেনি। আর সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে নাছিমা লুৎফর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। ওই বাড়িতে জাহাঙ্গীর আলম নামে পুলিশের এক উপপরিদর্শক ভাড়া থাকেন। নিচে তাঁর মোটরসাইকেল ছিল। সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাহেদুল ইসলাম বলেন, বড়পুরকুরপাড় কেন্দ্রে বিজিবি ও পুলিশ পৌঁছানো পর্যন্ত ২০-২৫ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।