দেশের প্রথম লোহার খনি দিনাজপুরে

দেশের প্রথম লোহার খনির সন্ধান মিলেছে দিনাজপুরে। হাকিমপুর, দিনাজপুর, ১৮ জুন। ছবি: এ এস এম আলমগীর
দেশের প্রথম লোহার খনির সন্ধান মিলেছে দিনাজপুরে। হাকিমপুর, দিনাজপুর, ১৮ জুন। ছবি: এ এস এম আলমগীর

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় দেশের প্রথম লোহার খনির সন্ধান মিলেছে। উপজেলার ইসবপুর গ্রামে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) এ খনির সন্ধান পেয়েছে। জিএসবি জানিয়েছে, খনিটিতে উন্নত মানের লোহার আকরিক (ম্যাগনেটাইট) রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জিএসবির উপপরিচালক মোহাম্মদ মাসুম। দীর্ঘ দুই মাস ধরে কূপ খনন করে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানান তিনি। লোহার পাশাপাশি খনিটিতে মূল্যবান কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে বলে জানান জিএসবি কর্মকর্তারা।

জিএসবির কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, ভূগর্ভের ১ হাজার ৩০০ ফুট থেকে ১ হাজার ৬৫০ ফুটের মধ্যে লোহার একটি স্তর পাওয়া গেছে। খনিটির আয়তন প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার। খনিতে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন টন লোহাসহ মূল্যবান পদার্থ রয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম লোহার খনি।

উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইসবপুর গ্রাম। এই গ্রামের ৫০ শতক জমিতে খনিজ পদার্থের সন্ধানে কূপ খনন করেছে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর।

খননকাজে নিয়োজিত জিএসবির উপপরিচালক মোহাম্মদ মাসুম আজ প্রথম আলোকে মোবাইল ফোনে বলেন, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে, সেগুলোর অধিকাংশে লোহার গুণগত মান ৫০ শতাংশের নিচে। তবে এ খনিতে লোহার মান ৬০ শতাংশের ওপরে। জয়পুরহাট ও ঢাকায় জিএসবির পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

দিনাজপুরের খনির লোহার মান অন্যান্য দেশের খনির থেকে উন্নত। হাকিমপুর, দিনাজপুর, ১৮ জুন। ছবি: এ এস এম আলমগীর
দিনাজপুরের খনির লোহার মান অন্যান্য দেশের খনির থেকে উন্নত। হাকিমপুর, দিনাজপুর, ১৮ জুন। ছবি: এ এস এম আলমগীর

জিএসবির এই উপপরিচালক বলেন, এর আগে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর ২০১৩ সালে একই এলাকার মুশিদপুরে কূপ খনন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছিল। সেই গবেষণার সূত্রধরে ৬ বছর পর চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুরে কূপ খনন শুরু হয়।

এর আগে গত ২৬ মে জিএসবির মহাপরিচালক জিল্লুর রহমান চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা ইসবপুর পরিদর্শন করেন। লোহার খনি আবিষ্কার হতে চলেছে—এমন ইঙ্গিত ওই সময় মিলেছিল।

জিএসবির উপপরিচালক (ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ার) মো. মাসুদ রানা বলেন, ইসবপুর গ্রামের খনন এলাকায় ৩০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল তিন শিফটে কাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিএসবির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সরকারের সহায়তা পেলে জিএসবি এ খনি থেকে লোহাসহ অন্যান্য পদার্থ উত্তোলন করতে পারবে।

দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, লোহার খনির পাশে নতুন করে দীঘিপাড়া কয়লাখনির কাজ চলছে। এসব খনি থেকে পুরোদমে উত্তোলন শুরু হলে উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের মানুষদের জীবনমান পাল্টে যাবে। কর্মসংস্থান হবে এখানকার মানুষদের। দেশেরও লাভ হবে।