তাহলে সচিবেরা আছেন কেন: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সবকিছুতে প্রধানমন্ত্রীর কেন ডাইরেকশন (নির্দেশনা) দিতে হবে? সেক্রেটারিরা কি তাঁদের পকেটে ঢুকে গেছেন? বন্ধের সময় বদলির আদেশ দিয়েছে। লজ্জা নাই। কি বলব, প্রধানমন্ত্রীকে যদি সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তাহলে সচিবেরা আছেন কেন?’

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এক রিটের শুনানিতে এই প্রশ্ন রাখেন। সম্প্রতি ভোক্তা স্বার্থে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে আলোচনায় আসা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে বদলি ও পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা বাতিলের প্রসঙ্গে শুনানি এলে আদালত ওই প্রশ্ন রাখেন।

বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার, জব্দ ও ধ্বংস করতে নির্দেশনা চেয়ে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও আইনজীবী মাহফুজুর রহমান গত সোমবার রিটটি করেন, যার ওপর গতকাল শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

শুনানিকালে আদালত আরও বলেন, ‘এ রকম করলে তো যাঁরা সৎ অফিসার, তাঁরা ডিমোরালাইজড হয়ে যাবেন। নিরুৎসাহিত হয়ে যাবেন। যাঁরা বন্ধের সময়ে ওই কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল।’

এর আগে ৩ জুন আড়ংয়ে অভিযান চালানোর দিন মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বদলির আদেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়। ফিনল্যান্ড সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তাঁকে স্বপদে বহাল রাখা হয়।

‘৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ’ শিরোনামে ১১ জুন প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা কয়েকটি প্রতিবেদন যুক্ত করে এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে ওই রিট করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।

পরে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ওই বদলির আদেশ স্থগিত হওয়ার বিষয়ে আদালত প্রশংসা করেছেন।

শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মজুত ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার বা ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও মজুতে জড়িত ব্যক্তি ও ফার্মেসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়। অপর নির্দেশনায় আদালত ফার্মেসিতে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি, সংরক্ষণ ও সরবরাহকারীদের চিহ্নিত করতে স্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে স্বাস্থ্যসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।