স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী নির্বাচিত

বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থীর শহরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর। বেলা আড়াইটার দিকে জেলা শহরের হালদারপাড়ায়।
বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থীর শহরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর। বেলা আড়াইটার দিকে জেলা শহরের হালদারপাড়ায়।

স্বতন্ত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইভিএম যন্ত্রপাতি লুট ও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপরও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তাঁর নাম নাছিমা লুৎফর রহমান।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে নাছিমা লুৎফর রহমানের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের হালদারপাড়া এলাকার এল রহমান টাওয়ারে ২০-২৫ জনের একটি দল হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা একটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, পাজেরো জিপ ও টয়োটা কার এবং একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। তা ছাড়া একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে সদর থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। হামলায় জড়িত সন্দেহে জেলা সৈনিক লীগের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, মারুফ মিয়া, আরমান মিয়া ও ইয়াছিন আরাফাতকে আটক করে পুলিশ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিমা লুৎফুর রহমান (ঘোড়া) অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনে হেরে যাচ্ছেন, এই ভয়ে আমার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানভীর ভূঁইয়ার লোকজন এই হামলা চালিয়েছেন। আমার তিনটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং দুটি মোটরসাইকেল লুট করা হয়েছে। এ সবকিছুর মধ্যেও জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছেন। এই বিজয় ভোটারদের।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তানভীর ভূঁইয়া বলেন, ‘নাছিমা লুৎফর রহমানের সঙ্গে আমার কোনো দিন কথা হয়নি। তাঁকে আমি দেখিনি। আমার ছেলে, মেয়ে, পরিবারসহ উপজেলায় আছি। একা একা একটা ভাঙা গাড়িতে চলি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, হামলার শিকার স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাসভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উপজেলার সিঙ্গারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরাশানী পলিটেকনিক একাডেমি, ছতুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভিটিদাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ১৫-২০টি কেন্দ্র সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের বড় পুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেলা শহর থেকে আগত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী ইভিএম যন্ত্রপাতি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁরা একজন কনস্টেবলকে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হাসান সারোয়ার ও সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। কয়েকজন জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে হাসান সারোয়ারকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

দুপুর ১২টার দিকে চান্দুরা ইউনিয়নের সাতগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টরা ইভিএম যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটারের মনিটর ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই কেন্দ্রে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে বলে নিশ্চিত করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নূর মাহমুদ।

বেলা দেড়টার দিকে বুধন্তী ইউনিয়নের আহলাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ফায়েজ মিয়া নামের এক যুবককে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা এ হামলা চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে পাশের শশই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আজিজুর রহমানকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা মারধর করেন।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন বলেন, ‘নাছিমা লুৎফর রহমান কালোটাকা ছেড়েছেন। তাঁর গুন্ডাবাহিনীর হামলায় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহত হন। ছাত্রলীগ কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা করেনি। আর সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে লুৎফর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।