বন উজাড় করে জমি দখলের অভিযোগ

সাগর মোহনায় ভোলার কালকিনি বিটের বনের গাছ কেটে দখল হচ্ছে জমি। গত রোববারের ছবি।  প্রথম আলো
সাগর মোহনায় ভোলার কালকিনি বিটের বনের গাছ কেটে দখল হচ্ছে জমি। গত রোববারের ছবি। প্রথম আলো

ভোলার সাগর মোহনার কালকিনি বিটের বন উজাড় করে দখল হচ্ছে জমি। অভিযোগ উঠেছে, মনপুরা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ মোল্লার নেতৃত্বে চর নিজাম ও চর আনোয়ারা নিয়ে গঠিত বন বিভাগের জমি দখল করা হচ্ছে।

কালকিনি বিট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চর নিজাম বনের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ২৪০ একর। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার একর বন দখল হয়ে গেছে। গত দুই বছরেই দখল হয়েছে প্রায় ৩০০ একর। এই বিটের বন সংরক্ষক এস এম আমির হামজা বলেন, গত শনিবার ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ মোল্লার নেতৃত্বে শতাধিক লোক এসে বনের জমি মাপজোখ করে পিলার পুঁতেছেন। নিষেধ করা সত্ত্বেও তাঁরা শোনেননি। এর আগেও তাঁরা জমি দখল করেছেন। এসব জমিতে কয়েক বছর আগেও বনায়ন ছিল। তাঁরা বন উজাড় করে কাঠ নিয়ে যান ইটভাটায়। জমি ফাঁকা করে আবার জমি দখল করছেন।

আমির হামজা আরও বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম। অস্ত্র বলতে শুধু লাঠি। একজন মাত্র বনপ্রহরী। পুলিশ প্রশাসনকে বললেও তারা ব্যবস্থা নেয় না। গত ৮ বছরে ১৪টি মামলা করেছি। কিন্তু মামলা করলেও হামলা হয়। গত দুই বছরে তিন দফায় বিট কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। সব আসবাব ভেঙে ফেলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ মোল্লা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০০৪-০৫ সালে ভূমিহীনদের জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা জমি বুঝে পাননি। বন বিভাগ প্রতিনিয়ত বাধা দিয়ে আসছে। সেই জমির দখল বুঝে নিতে তাঁরা চরে এসেছেন। বনের জমি দখল নেওয়া হচ্ছে না।

বন বিভাগ ১৯৭৮ সালে সাগর মোহনার চর নিজামে বনায়ন শুরু করে। বর্তমানে এই বনে কয়েক শ হরিণসহ হরেক প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। বনে ম্যানগ্রোভ বনায়ন ছাড়া কিছু কাঠ, নারকেল-সুপারির গাছ রয়েছে। মাটিতে পলি মাটির চেয়ে বালুর পরিমাণ বেশি। এখনো উচ্চ জোয়ারে বন প্লাবিত হয়। সবজির আবাদ তেমন একটা নেই। লোকজন বন উজাড় করে পুকুর কেটে উঁচু করে বাড়ি করেছে। ত্রাণ বিভাগ বনের মধ্যে ইট বিছিয়ে রাস্তা ও বন কেটে গুচ্ছগ্রাম-আশ্রয়ণ প্রকল্প করেছে। বেসরকারি হিসাবে চরে ৭ শতাধিক পরিবারের বাস। এদের প্রধান জীবিকা মাছ ধরা। এসব মানুষ বনের জমি থেকে গাছ সংগ্রহ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ সারে। অভিযোগ আছে, বনপ্রহরীরা এ জন্য চরবাসীর কাছ থেকে সুবিধা নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ভূমি অফিস দুই দফায় ৬৭০টি কার্ডে ১ হাজার ১৭০ একর জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে। প্রভাবশালীরা চরে লোকজনকে বসাচ্ছেন। অনেক সচ্ছল পরিবারকেও জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেকে মনপুরা উপজেলা সদরে বসবাস করেন।

এ সম্পর্কে ভোলা উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া বলেন, চর নিজাম বনের কোনো জমি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ডি-রিজার্ভ করেনি। আর ভূমি অফিসকেও কোনো জমি বুঝিয়ে দেয়নি বন বিভাগ। তাই ওই বনের জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তারপরও যদি ভূমি অফিস বনের জমি বন্দোবস্ত দিয়ে থাকে, তা বন বিভাগ মানবে না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, বন বিভাগ চর নিজামের কোনো কৃষিজমি কাগজে-কলমে ভূমি অফিসকে বুঝিয়ে দেয়নি। বন বিভাগের মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর ও ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ভূমি অফিস চর নিজাম বনের কিছু জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে। পরে যখন দেখা গেল, বন বিভাগ জমি হস্তান্তর করেনি, তখন বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ভবিষ্যতে বন বিভাগ ভূমি কার্যালয়কে জমি হস্তান্তর করলে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে।