টুঙ্গিপাড়ায় দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ৫০

গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষকারীরা এ সময় ১২টি দোকান ও বাড়িতে ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়। সংঘর্ষ থামাতে ৩১৫টি রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ।

টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম এনামুল কবীর বলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীরামকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা গ্রামের একটি ছেলেকে গহওরডাঙ্গা ব্রিজের ওপর থেকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার রাতে শ্রীরামকান্দি ও গিমাডাঙ্গা গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে টুঙ্গিপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩১৫টি রাবার বুলেট ছোড়ে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ রাসেলের নামে আমার একটা স্কুল আছে। ১৭ জুন সন্ধ্যায় আমি বাচ্চাদের পড়াচ্ছিলাম। এক অভিভাবক এসে বললেন যে ব্রিজের ওপরে কয়েকজন ছেলে বসে আছে। নারীদের তারা কটূক্তি করছে। আমি তখন পশু হাসপাতালের সামনে ব্রিজের ওপর গিয়ে দেখি কয়েকজন বসে আছে। আমি ওখান থেকে তাদের চলে যেতে বলি। তাদের মধ্যে আলামিন বিশ্বাস ও আবুল হাসান বিশ্বাস আমার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি করে। পরে নামাজ পড়ে এসে দেখি আমার স্কুলে এবং বাড়িতে ভাঙচুর করেছে, দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়েছে। খবর পেয়ে আমাদের লোকজন গিয়ে তাদের ওপর পাল্টা হামলা করে। এতে উভয় পক্ষের দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে এবং লোকজন আহত হয়।’

গিমাডাঙ্গা গ্রামের আক্রম বিশ্বাস বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন আমাদের লোকের ওপর কোনো কারণ ছাড়াই হামলা করেছে। কারণ জানতে গেলে তারা আবার ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এরপর আমাদের লোকজন জড়ো হলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাটগাতি বাসস্ট্যান্ডের এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ এলাকায় সবাই নেতা হতে চায়, এটাই মারামারির মূল কারণ। তা ছাড়া এই দুই গ্রামের মধ্যে বহু বছর যাবৎ এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আগে যখন মারামারি হতো, তখন এখানকার মসজিদের মাইকে বলা হতো ১০ বছরের ওপরে কোনো ছেলে ঘরে থাকতে পারবে না। তাকে অবশ্যই মারামারিতে অংশগ্রহণ করতে হবে।’

আহত ব্যক্তিদের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৯ জনকে আসামি করে টুঙ্গিপাড়া থানায় মামলা করা হয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।