গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় চার আসামি গ্রেপ্তার

গৃহবধূ জান্নাতি আক্তারের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় চার আসামিকে নাটোর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নরসিংদী সদর, নরসিংদী, ১৯ জুন। ছবি: প্রথম আলো
গৃহবধূ জান্নাতি আক্তারের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় চার আসামিকে নাটোর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নরসিংদী সদর, নরসিংদী, ১৯ জুন। ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদী সদর উপজেলায় গৃহবধূ জান্নাতি আক্তারকে (১৮) পুড়িয়ে হত্যা মামলায় চার আসামিকে নাটোর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন নিহত জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম (৪৫), শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া (৫০), স্বামী সাব্বির আহমেদ (২৩) ও ননদ ফাল্গুনী বেগম (২০)। তাঁরা সবাই উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চরহাজীপুর এলাকার বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে নরসিংদী মডেল থানার উপপরিদর্শক নাইমুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে নাটোরের নারায়ণপুর এলাকার একটি বাসা থেকে এজাহারভুক্ত চার আসামি গ্রেপ্তার হন।

এদিকে আজ বুধবার বিকেলে চার আসামিকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনা আক্তারের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত আসামি সাব্বিরের ৪ দিন ও অন্য তিন আসামির ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পারিবারিক মাদক ব্যবসায় যোগ না দেওয়ায় জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় শনিবার জান্নাতির বাবা শরিফুল ইসলাম সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। ওই দিন রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাটোর জেলা পুলিশের সহায়তায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গৃহবধূ জান্নাতির হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক ও নারকীয় একটি ঘটনা। মামলার পর দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেছে। পুলিশি প্রতিবেদনও দ্রুত পাঠানো হবে। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

জান্নাতির পরিবারের লোকজন জানান, গত বছরের ঈদুল আজহার দিন জান্নাতির সঙ্গে সাব্বিরের বিয়ে হয়। জান্নাতির শ্বশুর-শাশুড়ি পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। বিয়ের পরে থেকে জান্নাতিকে মাদক ব্যবসায় সহযোগিতার জন্য চাপ দেয় সাব্বিরের পরিবার। রাজি না হওয়ায় সাব্বিরের পরিবার বিভিন্ন সময়ে জান্নাতির ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। সবশেষ একই বিষয় নিয়ে গত ২১ এপ্রিল রাতে শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদের সঙ্গে ঝগড়া হয় জান্নাতির। পরদিন ভোরে নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় জান্নাতির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন সাব্বিরের পরিবারের লোকজন।

জান্নাতির পরিবারের লোকজন আরও জানান, এই ঘটনায় তাঁরা প্রথমে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ গড়িমসি করে। পরে তাঁরা আদালতে মামলা করেন। মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। অন্যদিকে ৪০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত ৩০ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান জান্নাতি। ঘটনার ৫৫ দিন পর অভিযোগ আমলে নিয়ে গত শনিবার রাতে মামলা নেয় নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ। শাশুড়ি শান্তি বেগমকে প্রধান আসামি করে মামলাটি করেন জান্নাতির বাবা শরিফুল ইসলাম।