এই সরকার লুটেরা তোষণকারী: রুমিন ফারহানা

রুমিন ফারহানা
রুমিন ফারহানা

ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণ নিয়ে জাতীয় সংসদে সমালোচনা করেছেন একাধিক সাংসদ। ব্যাংক খাতের সমালোচনা করে বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, এই সরকার লুটেরা তোষণকারী সরকার।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির আরেক সাংসদ জাহিদুর রহমান গণতন্ত্রের স্বার্থে দ্রুত আরেকটি নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান।

সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, ব্যাংকের ঋণ খেলাপিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে আছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরকারবান্ধব অর্থনীতিবিদরাও সরকারকে ঋণখেলাপি বান্ধব সরকার বলে আখ্যায়িত করছেন। এটা লুটেরা তোষণকারী সরকার, ঋণ খেলাপি বান্ধব সরকার। অবলোপন ছাড়াই বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে ব্যাংগুলোকে এক একটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হলে ব্যাংকের হাতে আর অর্থ থাকবে না।

রুমিন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানেই শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে যাওয়া। ২০১০-১১ সালে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে লক্ষ লক্ষ মধ্যবিত্তকে পথে বসানো হয়েছে। শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রেও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বাজেটে নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক আখ্যা দিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, বাজেট সরকারের চরিত্র সম্পর্কে ধারণা দেয়। দেশের সব থেকে দরিদ্র প্রবণ ১০টি জেলায় মোট উন্নয়ন বাজেটের শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ বরাদ্দ হলেও গোপালগঞ্জ জেলায় এই দশ জেলার মোট বরাদ্দের ৫ গুণের বেশি বরাদ্দ হয়। কেন প্রতিদিন বৈষম্য বাড়ছে তার জবাব পাওয়া যাবে এই বাজেট পড়লে।

রুমিন বলেন, সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ দাবি করলেও এটি একেবারেই ভুল তথ্য। শিক্ষার সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১৪ হাজার কোটি টাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বরাদ্দ। সঠিক হিসেব দেখা যায় শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির মাত্র দুই দশমিক এক শতাংশ। শিক্ষার মানোন্নয়নের কোনো পদক্ষেপ এই বাজেটে নেই।

রুমিন দাবি করেন, বাজেটে কৃষকদের প্রতি ন্যূনতম সংবেদনশীলতা দেখানো হয়নি। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ নেবে তার কোন দিক নির্দেশনাও নেই এই বাজেটে। বেসরকারি বিনিয়োগ ২২ শতাংশে স্থবির হয়ে আছে। তেল, চিনি, গুঁড়া দুধের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে বসিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনকে আরও কষ্ট সাধ্য করা হয়েছে।

রুমিন বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশে মহামারি রূপ নিয়েছে। সড়ক, রেলপথ নির্মাণে অন্য দেশের থেকে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে।
বিএনপির আরেক সাংসদ জাহিদুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ধনীকে ধনী করবে, এই বাজেট কালো টাকার মালিকদের সুরক্ষা দেওয়ার বাজেট।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দলের নেতা-কর্মীদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি করে জাহিদ বলেন, গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া জেল খানায়। দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি তদন্ত করে এসব মামলা প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। জেল, জুলুম, গুম হত্যা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। ইলিয়াস আলীসহ অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। যদি তাঁরা বেঁচে থাকে তবে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
জাহিদ বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে চান না। গোটা জাতি জানে কী রকম নির্বাচন হয়েছে।

আওয়ামী লীগ-জোটের শরিক জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার বলেন, ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা মেটাতে না পারলে লুটপাট বন্ধ করা যাবে না, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য, বাজার স্থিতিশীল রাখা সবকিছু মিলিয়ে কৃষি কমিশন করার প্রস্তাব কেন।

শিরিন বলেন, বিএনপি সংসদে এসে বলছে সংসদ অবৈধ। তারা নিজেদেরই অবৈধ ঘোষণা করেছে। এর থেকে হাস্যকর কিছু হতে পারে না।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাজেটের আকার নিয়ে কথা হয়। কিন্তু এ বাজেট বাস্তবসম্মত। বড় বাজেট সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে। বড় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করতে পারে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, যাঁরা রেমিট্যান্স পাঠান তারা যেন সরকারি কর্মকর্তাদের যথেষ্ট সহায়তা পান তা নিশ্চিত করতে হবে। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা এ বাজেটের সবচেয়ে ভালো প্রণোদনা।

নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারি দলের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতার বাইরে থাকা মূল নারী সমাজ কতখানি বৈষম্যের শিকার তার একটি সমীক্ষা হওয়া দরকার। নারীর ক্ষমতায়নে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজ দলগুলোতে ওয়ার্ড ইউনিয়ন পর্যায়ে সভাপিতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ২৫ ভাগ নারী, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫ ভাগ নারী প্রার্থী দেওয়া হোক। রাজনৈতিকভাবে এটা করতে হবে। না হলে নারীরা এগিয়ে আসতে পারবেন না।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানান সরকারি দলের সাংসদ কাজী কেরামত আলী।
ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানো না হলে রাজস্ব আয় সম্ভব হবে না।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সুবিদ আলী ভূইয়া, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন নদভী প্রমুখ বক্তব্য দেন।