নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কারণে নৌকার ভরাডুবি?

আলীউজ্জামান চৌধুরী  ও সাইফুল ইসলাম
আলীউজ্জামান চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী আলীউজ্জামান চৌধুরী জয়ী হয়েছেন। তিন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী সাইফুল ইসলাম সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাঁদের সঙ্গে দূরত্বের এ পরাজয় হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য খাইরুল ইসলাম বলেন, তাঁকে (সাইফুলকে) দল গোছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। বিভিন্ন কমিটি গঠনের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। দলীয় নেতা-কর্মী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়।

তবে সাইফুল বলেন, এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। এসব মিথ্যা কথা।

গত মঙ্গলবার কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সহিংসতা ছাড়া শেষ হয়। ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলাম (নৌকা), নুরে আলম সিদ্দিকী হক (মোটরসাইকেল) ও আলীউজ্জামান চৌধুরী (আনারস) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নুরে আলম কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির নির্বাহী সদস্য। আলীউজ্জামান কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

নির্বাচনে আলীউজ্জামান চৌধুরী ৩৭ হাজার ২০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নুরে আলম। তিনি পান ২২ হাজার ৪৩৮ ভোট। অপরদিকে সাইফুল পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৯৩৩ ভোট।

নেতা-কর্মীরা বলেন, নেতা-কর্মীদের মারধর, হুমকি ও পুলিশের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে মঙ্গলবার সকালে সাইফুল নির্বাচন স্থগিত চেয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন স্থগিত না করলে নির্বাচন বর্জন করবেন বলে ঘোষণা দেন। পরে অবশ্য বর্জন করেননি।

>বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসে সাইফুল নিজের একটি বলয় গঠনের চেষ্টা করেন। এতে করে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে সাইফুল পিছিয়ে আছেন তা অনেকে বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু এমন ভরাডুবি হবে তা কেউ বোঝেননি। ২০০৭-০৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন সাইফুল। উপজেলার প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু এরপর সাইফুল নিজের মতো করে একটি বলয় গঠনের চেষ্টা করেন। এতে করে দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। বছর দুই ধরে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। স্থানীয় সাংসদ জিল্লুল হাকিম সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক শীতল।

এদিকে, বিগত নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত আলীউজ্জামান চৌধুরী সম্প্রতি সাংসদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সাইফুলকে পরাজিত করতে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ তাঁর পক্ষ নেয়। সাইফুল নির্বাচনের আগে সাংসদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ দেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জাহিদ হোসেন বলেন, কাজী সাইফুল ইসলাম বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর বিএনপির সন্ত্রাসী ঘরানার লোকজন দলে নিয়ে আসেন। তাদের বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব দেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রকৃত আওয়ামীপন্থীদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। যার পরিণতি নির্বাচনের ফলাফল।

তবে কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি বিএনপির লোকদের দলে জায়গা দেননি। তবে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ আলীউজ্জামানকে জেতাতে কাজ করে। তিনি সংঘাত চাননি। তাই নির্বাচন স্থগিত করার আবেদন করেছিলেন।

অন্যদিকে আলীউজ্জামান বলেন, তিনি আগে আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। সে সূত্র ধরে তাঁর সঙ্গে অনেক নেতা–কর্মীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে। সেটা তাঁকে জিততে সাহায্য করেছে।