ভয়-চাপ-হয়রানিতে দুর্বল 'নিরাপদ' কর্মসূচি

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মোখলেছুর রহমানকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট। স্ত্রী জেসমিন নাহার পরদিন দুপুরে সাতক্ষীরা সদর থানাহাজতে তাঁর হাতে ‘ভাতের বাটি’ দিয়ে এসেছিলেন। তারপর থানা বলতে শুরু করল, পুলিশ মোখলেছুরকে ধরেনি।

জেসমিন তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সেই থেকে তিনি নিখোঁজ স্বামীকে খুঁজছেন। একটা সময় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতা পেয়েছিলেন। এখন কেউ পাশে নেই।

প্রথম আলোর অনুসন্ধান বলছে, কয়েক বছর ধরে সরকারের জন্য স্পর্শকাতর নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সোচ্চার হওয়া কমে যাচ্ছে। যেমন গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে মৃত্যু কিংবা গায়েবি মামলার মতো ঘটনা। বিপন্ন মানুষের যাওয়ার জায়গা ক্রমে সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

গত ২৮ এপ্রিল জেসমিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। হাইকোর্ট বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তকারী হাকিম প্রতিবেদনে লিখেছেন, পুলিশের বয়ানটি বানানো ছিল।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তের পর জেসমিনকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু একা জেসমিন তা করে উঠতে পারেননি।

চলতি দশকের গোড়াতেও এ ধরনের নিপীড়নের ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো অনেক বেশি সোচ্চার ও সহায়ক থাকত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞানের ছাত্র আবদুল কাদেরকে পুলিশ মধ্যরাতে মারধর করে খিলগাঁও থানায় নিয়ে গিয়েছিল ২০১১ সালের ১৬ জুলাই। সকালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছিলেন।

ঘটনাটি বড় করে সংবাদমাধ্যমে এলে ফুঁসে উঠেছিলেন ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো। আদালত স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে রুল জারি করেছিলেন। ওই ঘটনায় ওসিসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি হয়েছে।

তুলনীয় ঘটনা আরও আছে। যেমন টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়া এবং ঝালকাঠির লিমন হোসেনের র‌্যাবের গুলিতে পা হারানোর ঘটনা। প্রথমটি গত বছরের। একরামুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার বলেছেন, বিচার পাননি, পাশেও কেউ নেই। দ্বিতীয়টি ২০১১ সালের ঘটনা। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ একাধিক বেসরকারি সংস্থা লিমনের পাশে ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে র‌্যাবের করা দুটি মামলা প্রত্যাহার হয়ে গেছে।

শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখে প্রথম আলো সেগুলোর কাজ ও সহায়তার বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে চেয়েছে। এই প্রতিবেদক ২১ জন দীর্ঘকালীন মানবাধিকারকর্মী বা পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন। নতুন-পুরোনো ১৬টি ঘটনা খুঁটিয়ে দেখেছেন।

দেখা যায়, স্পর্শকাতর বিষয়ে এখন আর সেভাবে কাজ হচ্ছে না। মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, এর একটা বড় কারণ সরকারের চাপ আর গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাব। আগেও নানা ধরনের চাপ ছিল, তবে ২০১৩-১৪ সালের পর থেকে তা কঠোর হয়েছে। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের প্রতি সরকার এখন অনেক বেশি অসহিষ্ণু ও অনমনীয়।

মাদারীপুর লিগ্যাল এইডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার চেতনাই ছিল মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পুঁজি। সমমর্যাদা ও সম-অধিকারের ভিত্তি হলো স্বাধীনতা, শান্তি ও ন্যায়বিচার। আর এই তিনের ভিত্তি হলো গণতন্ত্র। পরিপূর্ণ গণতন্ত্র না থাকলে মানবাধিকারের কাজ এগোয় না।

মানবাধিকারের তখন ও এখন

নারীর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জন্ম ১৯৭০ সালে। ওই দশকের শেষ দিকে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত হয় মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন আর বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। আসে ক্যাথলিক পাদরি ফাদার আর ডব্লিউ টিম ও রোজালিন ডি কস্তা পরিচালিত দুটি প্রতিষ্ঠান।

আসক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৭ সালে মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিওদের একটি মোর্চা হয়। নাম বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ (সিসিএইচআরবি)। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতিসহ (বিএনডব্লিউএলএ) বড় সংস্থাগুলো ‍মাঠে আসে। নবীনতম হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ। জন্ম ২০০৯ সালে।

এসব সংস্থার কাজের বড় অংশ ছিল নারী নির্যাতন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার, বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক ও গ্রেপ্তার, যৌনপল্লি উচ্ছেদ, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার, পরিবেশ, ভূমি ও বন দখল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিপীড়ন নিয়ে।

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঘটনার পরপর একযোগে সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধান করত। ফিরে এসে সংবাদমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করত। আইনি লড়াই এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিত।

কয়েকজন পুরোনো কর্মী বলেছেন, কাজটায় সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ লাগে। আদালতের বলিষ্ঠ ভূমিকা দরকার হয়। গত পাঁচ-ছয় বছরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পর্শকাতর ঘটনায় ঐক্যবদ্ধ কোনো আন্দোলন গড়ে তোলার নজির নেই।

গত এক বছরে র‌্যাব-পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাড়ে ৩০০-র বেশি মানুষ নিহত হন। গত ১০ বছরে যাঁরা গুম হয়েছেন, তাঁদের ১৩৬ জন এখনো নিখোঁজ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীকে মানহানি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আইনজীবী পলাশ কুমার রায়। তিনি কারা হেফাজতে রহস্যজনকভাবে আগুনে পুড়ে মারা যান। নির্বাচনের রাতে এক নারীর গণধর্ষণে যুক্ত ছিলেন শাসক দলের নেতা-কর্মী। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকসহ অনেককে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জোরালো কর্মসূচি ছিল না।

১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (শেড) নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ গাইন প্রথম আলোকে বলেন, বন ধ্বংসসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থা কিন্তু বরাবর বাধা ঠেলেই কাজ করে আসছে। কিছু সীমিত বিষয়ে সাফল্যও আছে।

তবে অনেক মানবাধিকারকর্মী বলেছেন, গত কয়েক বছরে কাজ করার ঝুঁকি বেড়েছে। সংস্থাগুলোর নিবন্ধন ও তহবিল অনুমোদন প্রক্রিয়া জটিল হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার হয়রানি বেড়েছে।

চাপের নানা চেহারা

বিদেশি সহায়তা নেয় বলে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক আইন) রেগুলেশন ২০১৬ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোয় নিবন্ধিত হতে হয়।

প্রবীণ মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জবাবদিহির জন্য এটা ঠিক আছে। কিন্তু ব্যুরোর অনুমোদন পেতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও জাতীয় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) ছাড়পত্র লাগে। তিনি বলেন, সেই পর্যায়ে অহেতুক ঘোরানো হয়। আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আপত্তিকর ধারা ও ব্যবহার। মনে হচ্ছে সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যতটা আগ্রহী, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ব্যাপারে ততটা উৎসাহী নয়।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকার শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। হেফাজতে ইসলামের ঢাকা সমাবেশে নিহতদের তালিকাকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে অধিকারের নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান খান গ্রেপ্তার হন। পরের বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন নবায়ন করছে না ব্যুরো। এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর অ্যাসাইনমেন্ট কর্মকর্তা হুর-এ-জান্নাত এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে এর কারণ কিছু বলেননি।

অধিকার এখন মূলত পত্রপত্রিকা থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজটি করছে। তাদের মাসিক মানবাধিকার প্রতিবেদন এ বছর থেকে ত্রৈমাসিক হয়েছে। সার্বক্ষণিক নিয়মিত কর্মী আছেন মাত্র একজন। অন্যরা স্বেচ্ছাসেবী। তাঁদের ওপরও চাপ রয়েছে। সম্প্রতি অন্যের আইডি চুরি করে ফেসবুকে মানহানিকর লেখালেখির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ময়মনসিংহে গ্রেপ্তার হয়েছেন অধিকারের স্বেচ্ছাসেবক ও সাংবাদিক আবদুল কাইয়ূম।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অবশ্য মনে করেন না যে মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের ওপর গোয়েন্দা সংস্থার চাপ ও নজরদারি আছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার তো খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে মানবাধিকারের পেছনে ঘুরবে। এটা আমি বিশ্বাস করি না।’

কিন্তু এমন চাপের নজির আছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরার পথে গুম হন। পরে ফিরেও আসেন। সে বছরই আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লালমাটিয়ার কার্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। একদল লোক তাঁকে তুলে নিতে চেষ্টা করে।

কমপক্ষে তিনটি বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা বলেছেন, ২০১৬ সালে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাঁদের কার্যালয় ও বাসায় যান। তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জানতে চান। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এখন মানবাধিকারবিষয়ক মামলাগুলোর নজরদারি করেন, আদালতকক্ষে হাজির থাকেন।

গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতিসহ ছয়টি মানবাধিকার সংস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করে। একাধিক কর্মীকে ফোন করে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এই কাজে যুক্তদের নাম জানতে চেয়েছেন।

২০১০ সালেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আসক সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে একজন কাপড় ব্যবসায়ী গুম হওয়ার ঘটনার যৌথ তদন্ত করেছিল। মন্ত্রণালয় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করেছিল। এখন কমিশন কী করছে? চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, তাঁরা বেশ কিছু ঘটনা তদন্ত করে দেখার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিচ্ছেন। কিন্তু গৎবাঁধা উত্তর পাচ্ছেন—‘বিষয়টি তদন্তাধীন’।

কমিশনের শেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে আছে, কমিশন ১৮টি ঘটনায় স্বপ্রণোদিত রুল জারি করেছে। এর মধ্যে দুটি ছিল কারা হেফাজতে ছাত্রদল নেতা জাকির এবং ঢাকায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে অপহরণ মামলার আসামি আসলামের মৃত্যুর বিষয়ে। দুটির একটিরও জবাব পায়নি কমিশন।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মাঝেমধ্যে চিঠিপত্র পাঠায়। এটা ঠিক নয় যে কমিশনের পাঠানো চিঠি মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে না। যদি কোনো অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

২০০৯ সালের জুনে আসক, ব্লাস্ট ও কর্মজীবী নারী একটি রিট করেছিল। তারা র‌্যাবের বিরুদ্ধে ৫২৭টি এবং পুলিশের বিরুদ্ধে ৪৪২টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনে। ৭ জুলাই আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে ছয় দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। ১০ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি মুলতবির আবেদন করে। এই মামলা সেখানেই ঠেকে আছে।

অবসরে যাওয়া বিচারপতি নিজামুল হক স্বৈরশাসক এরশাদের সময় সুপ্রিম কোর্টে ওকালতি করতেন। আসকের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি বলছিলেন, ওই সময় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিয়মিত বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষজন গ্রেপ্তার হতেন। তাঁরা আদালতের নজরে আনতেন। আটক ব্যক্তিরা জামিনে মুক্তিও পেতেন।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মানবাধিকার আইনজীবী বলেন, এখন সরকারের চাপ কখনো কখনো আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিন আবেদন শুনতে হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চ বিব্রত বোধ করেছেন।

সংস্থাগুলো এখন কিছুটা গা বাঁচিয়ে চলছে। প্রকল্পগুলো অপেক্ষাকৃত কম স্পর্শকাতর বিষয়ে। কর্মীরা বলছেন, তাঁরা ব্যক্তি উদ্যোগে সহযোগিতা বা আইনি সহায়তা করার চেষ্টা করছেন। নিরাপদ সড়ক বা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তেমনটা দেখা গেছে। গুমের শিকার পরিবারগুলো ‘মায়ের ডাক’ নামে যে সংগঠন গড়েছে, সেটাকে সহায়তা করছেন দু-একজন ব্যক্তি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালের মতে, এনজিও নামে অভিহিত বেসরকারি মানবাধিকার তথা নাগরিক সংস্থাগুলো এমনিতেই নানা চাপের মধ্যে আছে। এগুলো বিদেশি সহায়তানির্ভর। এই মুহূর্তে সেই সাহায্য অনেক কমে গেছে।

প্রথম আলোকে সুলতানা কামাল আরও বলেন, সরকারগুলোও নানা বাধার সৃষ্টি করেছে। কিছু সংস্থা চেষ্টা করে যাচ্ছে, তবে সবকিছু মিলে প্রত্যাশিত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর কথায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার নিশ্চিত করার মৌলিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের। নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমর্থন-সহযোগিতা ছাড়া একা বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাজ করা কঠিন।

আগামী পর্ব: তহবিল কমছে, কাজ সংকুচিত হচ্ছে

আরও  পড়ুন :-