'চালকলে চেয়ারে বসে ছিলেন সোহেল তাজের ভাগনে'

সোহেল তাজের ভাগনে ইফতেখার আলম। ছবি: সংগৃহীত
সোহেল তাজের ভাগনে ইফতেখার আলম। ছবি: সংগৃহীত

অপহরণের ১২ দিন পরে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বটতলা এলাকায় একটি চালকলের ভেতরে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের ভাগনে সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভকে পেয়েছে পুলিশ। এর আগে ইফতেখারকে ওই এলাকায় একটি গাড়ি থেকে কয়েকজন নামিয়ে দেয়। এরপর ইফতেখার ওই চালকলের ভেতরে যান।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন আজ সকাল নয়টায় সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, ভোর আনুমানিক পাঁচটার দিকে তাঁর (পুলিশ সুপার) নম্বরে ফোন আসে। ফোনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের চট্টগ্রাম শাখা থেকে জানানো হয়, তারাকান্দা উপজেলার বটতলা এলাকার একটি চালকলের ভেতর ইফতেখার আলম আছেন। দ্রুত এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করে কাউন্টার টেররিজম। পরে পুলিশ ‍সুপার ওই চালকলে যান। তিনি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও তারাকান্দা থানা পুলিশকে ঘটনাস্থলে যেতে নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপার সেখানে গিয়ে দেখতে পান, ইফতেখার আলম চালকলের সামনে একটি চেয়ারে বসা।

পুলিশ সুপার বিফ্রিংয়ে জানান, ভোরে ইফতেখার আলমকে তারাকান্দা উপজেলার জামিল রাইসমিল নামের একটি চালকলের সামনে গাড়ি থেকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। পরে ইফতেখার নিজেই হেঁটে হেঁটে চালকলের ভেতরে যান। সেখানে সমীর নামের ম্যানেজারকে ইফতেখার নিজের পরিচয় দিয়ে পরিবারকে ফোন করতে অনুরোধ করেন। পরে সমীর ফোন করে পরিবারকে বিষয়টি জানান। পরিবার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে বিষয়টি জানায়।

পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, উদ্ধারের পর ইফতেখারকে বাহ্যিকভাবে সুস্থ দেখা গেছে। তবে তিনি ওই সময় অপহরণ ও উদ্ধারের বিষয়ে কোনো কিছু বলতে চাননি। পরিবারের ইচ্ছায় তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহে আইনি ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।

উদ্ধার করার পর পুলিশের সঙ্গে ইফতেখার আলম। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধার করার পর পুলিশের সঙ্গে ইফতেখার আলম। ছবি: সংগৃহীত

সকালে তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, সৌরভকে এখন ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বটতলা এলাকায় একটা গাড়ি থেকে ইফতেখারকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

আজ সকাল ছয়টায় ফেসবুক লাইভে এসে সোহেল তাজ জানান, যে জায়গায় তাঁর ভাগনেকে ফেলে রাখা হয়েছিল, সেখান থেকে পুলিশ সুপার তাঁকে নিয়ে এসেছেন। সৌরভ এখন পুলিশ হেফাজতে। তাঁকে ঢাকায় আনা হচ্ছে।

সোহেল তাজের ভাগনে সৌরভ ৯ জুন চট্টগ্রাম থেকে অপহৃত হন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গত মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সৌরভের বাবা-মা জানান, গত ১৬ মে বনানীর একটি বাসা থেকে র‍্যাব-১ পরিচয়ে সৌরভকে একদল লোক তুলে নিয়ে যায়। তারাই দ্বিতীয় দফা অপহরণের সঙ্গে জড়িত। অপহরণের প্রথম থেকে র‍্যাব-পুলিশ ছাড়াও তাঁরা দুটি গোয়েন্দা সংস্থার যুক্ত থাকার কথা বলছেন। তাঁদের অভিযোগ, সৌরভের ব্যক্তিগত একটি সম্পর্কের জের ধরে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে ফেসবুক লাইভে সোহেল তাজ বলেন, মঙ্গলবার রাত ২টা ২০ মিনিটে সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভের ফোন নম্বর থেকে তাঁর মায়ের নম্বরে ফোন এসেছিল। লাইভে তাঁর সঙ্গে ছিলেন সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ও বাবা মো. ইদ্রিস আলী। তাঁর প্রশ্নের জবাবে সৌরভের বাবা-মা বলেন, রাত ২ টা ২০ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সৌরভের মা ইয়াসমিনের নম্বরে ফোন আসে। কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে কেউ কথা বলেনি। ছিল সুনসান নীরবতা। নম্বরটি খোলা আছে এবং অনবরত তাঁরা সৌরভের নম্বরে ফোন করলেও কেউ ধরছেন না। তাঁরা খুদে বার্তাও পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের উপকমিশনার (অপরাধবিষয়ক), গোয়েন্দা বিভাগ (উত্তর), উপকমিশনার (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম) ও পাঁচলাইশ থানাকে তাঁরা জানিয়েছেন।