জিন তাড়ানোর নামে নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যু

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলায় জিন তাড়ানোর নামে শারীরিক নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় করা মামলায় এক কবিরাজ দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ওই দম্পতিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নিহত গৃহবধূর নাম শাহনাজ আক্তার(২৫)। শাহনাজের স্বামী হিরণ মিয়া সৌদিপ্রবাসী। শাহনাজ ঢাকার শনির আখড়া সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় মায়ের কাছে থাকতেন।

আটক কবিরাজ দম্পতির হলেন ফারুক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তার। ফারুক হোসেন চাঁদপুরের উত্তর মতলবের মান্দার আলী এলাকার বাসিন্দা।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান বলেন, কবিরাজ দম্পতিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আগামী সোমবার রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য আছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মিজমিজি চৌধুরীপাড়ায় গত বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার রাতেই ওই গৃহবধূর মা সুরাইয়া বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলার পরে ওই রাতেই ভণ্ড কবিরাজ ফারুক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী জেসমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঈদুল ফিতরের তিন দিন পর শাহনাজ আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায়ই সময় উল্টাপাল্টা আচরণ করতেন। এ অবস্থায় শাহনাজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হলেও ভালো হননি। পরে প্রতিবেশীদের পরামর্শে গত রোববার শাহনাজের পরিবার কবিরাজ ফারুক হোসেনের শরণাপন্ন হয়। কবিরাজ ফারুক তাদের বলেন যে শাহনাজের ওপর বদ জিনের আছর পড়েছে। এক সপ্তাহ চিকিৎসা দিতে হবে। ১০ হাজার টাকা লাগবে। এতে রাজি হয় শাহনাজের পরিবার।

এজাহারে আরও বলা হয়, কবিরাজ ফারুক প্রথম দিন চিকিৎসা করেন। ভালো না হওয়ায় শাহনাজকে ফারুকের বাসায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর প্রস্তাব দেন। এতে শাহনাজের পরিবার রাজি হয়। পরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফারুক শাহনাজকে বাসায় নিয়ে যান। নিজের বাসায় নিয়ে কবিরাজ ফারুক ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন কবিরাজি চিকিৎসার নামে শাহনাজের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান। ফারুক ও তাঁর স্ত্রী প্রথমে শাহনাজকে ঝাড়ু দিয়ে পেটান। পরে শাহনাজের হাত ও পায়ের আঙুল মুচড়িয়ে দেন। এতে শাহনাজ চিৎকার করলে তাঁর গলায় এবং বুকে পা দিয়ে চেপে ধরেন এবং জিনকে চলে যেতে বলেন ভণ্ড কবিরাজ। নির্যাতনের একপর্যায়ে শাহনাজ নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এ সময় ফারুক শাহনাজের পরিবারকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। পরের দিন বুধবার বিকেলে শাহনাজের পরিবারের লোকজন কবিরাজের বাসায় গিয়ে শাহনাজের মৃতদেহ ফ্লোরে চাদর মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পায়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জসিম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।