সড়কে নির্মাণকাজের অনিয়ম ধরলেন এলাকাবাসী

সড়ক নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ। বাঘা, রাজশাহী, ২০ জুন। ছবি: প্রথম আলো
সড়ক নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ। বাঘা, রাজশাহী, ২০ জুন। ছবি: প্রথম আলো

এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে গিয়ে প্রকৌশলী বললেন, ‘বালু নিম্নমানের।’ আর এলাকাবাসী জানান, এর আগে যে বালু ব্যবহার করা হয়েছে, তা এর চেয়েও নিম্নমানের।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক নির্মাণকাজে বালু ও পাথরের অনুপাত সঠিক নেই। ফলে ডাকা হলো গবেষণাগারের পরীক্ষককে। তিনি এসে রাস্তা খুঁড়ে বালু ও পাথরের অনুপাত পরীক্ষা করলেন। এতে এলাকাবাসীর আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো।

বৃহস্পতিবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ‘বাঘা-আড়ানী’ সড়কের নির্মাণকাজে এই অনিয়ম পাওয়া গেছে। দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে এসব অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়।

ওই সড়কে নির্মাণকাজের পরীক্ষা করার সময় রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা, নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী সানজিদা, ঠিকাদার হারুন-অর-রশিদ, বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীনসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাঘা-আড়ানী সড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। কাজটি পেয়েছে যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মইনুদ্দীন বাঁশি। মাঠপর্যায়ে ঠিকাদারের অংশীদার রাজশাহীর হারুন-অর-রশিদ কাজটি করছেন। এই রাস্তার নির্মাণকাজের আর প্রায় দেড় কিলোমিটার বাকি আছে। এখন কাজ চলছে বাঘা পৌর এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে।

বাঘা-আড়ানী সড়কের নির্মাণকাজের অনিয়ম পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাঘা, রাজশাহী, ২০ জুন। ছবি: প্রথম আলো
বাঘা-আড়ানী সড়কের নির্মাণকাজের অনিয়ম পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাঘা, রাজশাহী, ২০ জুন। ছবি: প্রথম আলো

গত বুধবার রাস্তার নির্মাণকাজ চলাকালে সওজের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় জনগণ অভিযোগে জানান, কাজে নিম্নমানের বালু ব্যবহার করা হচ্ছে, দরপত্রের বর্ণিত বালু ও পাথরের অনুপাত মানা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে না এবং কার্পেটিংয়ের আগে বালু পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এ সময় অভিযোগকারীদের সরানোর জন্য ঠিকাদারের প্রতিনিধি চাঁদা চাওয়ার কথা বলে বাঘা থানায় খবর দিয়ে পুলিশ নিয়ে আসেন। এ সময় ওই রাস্তা দিয়ে বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীন যাচ্ছিলেন। স্থানীয় লোকজন তাঁর কাছেও এই অভিযোগ করেন। তিনি সেখান থেকে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন করে অভিযোগের বিষয়টি অবহিত করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী ওই অবস্থায় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং আজ বৃহস্পতিবার ওই সড়ক পরিদর্শন করবেন বলে আশ্বাস দেন।

স্থানীয় জনগণের ভাষ্য, পুরো রাস্তা নির্মাণেই অনিয়ম করা হয়েছে। তাঁরা কোনো আপত্তি করেননি। কিন্তু বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের জায়গাটিতে পানি জমে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এই এলাকার রাস্তাটুকু সঠিকভাবে করার আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানেও অনিয়ম করার কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং অভিযোগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই পাথরের সঙ্গে যে বালু মেশানো হয়েছে, তা নিম্নমানের বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু তাঁর উপস্থিতিতেই সেই বালুর ওপরেই নির্মাণশ্রমিকেরা কাজ করতে থাকেন।

বাঘা-আড়ানী সড়কের নির্মাণকাজের অনিয়মের অভিযোগ শুনছেন সওজের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীন। রাজশাহী, বাঘা, ২০ জুন। ছবি: প্রথম আলো
বাঘা-আড়ানী সড়কের নির্মাণকাজের অনিয়মের অভিযোগ শুনছেন সওজের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীন। রাজশাহী, বাঘা, ২০ জুন। ছবি: প্রথম আলো

সেখানে উপস্থিত বাঘা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শাহবাজ উদ্দিন বলেন, প্রকৌশলী যে বালু নিম্নমানের বলে মন্তব্য করেছেন, এত দিন রাস্তায় যে বালু ব্যবহার করা হয়েছে, তা এর চেয়ে আরও নিম্নমানের ছিল। প্রকৌশলী স্থানীয় জনগণের অভিযোগ শোনেন। তিনি বলেন, ‘কোনো মুখের কথা শোনা হবে না। তাঁদের ল্যাবে (গবেষণাগারে) বালু ও পাথরের অনুপাত পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষায় যদি অনুপাতের কোনো গরমিল পাওয়া যায়, তা হলে ঠিকাদারকে দিয়ে আবার রাস্তা ঠিক করিয়ে নেওয়া হবে।’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঠিকাদার হারুন-অর-রশিদও এই মন্তব্যে সায় দেন।

এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই সওজের গবেষণাগারের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে এসে রাস্তা খুঁড়ে পাথর ও বালুর অনুপাত নির্ণয় করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ৭০ ভাগ পাথর ও ৩০ ভাগ বালু থাকার কথা। কিন্তু পরীক্ষায় ৬০ ভাগ পাথর ও ৪০ ভাগ বালু পাওয়া গেছে।’ এই পরীক্ষার সময় উপস্থিত লোকজন জানান, তাঁরা বালু-পাথরের অনুপাত সমান সমান দেখেছেন।

এ বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, বালুর আর্দ্রতা বাদ দিতে হবে। সেটা বাদ দিলে বালুর অনুপাত ৪০ ভাগেই এসে দাঁড়াবে। যেভাবে পারেন ঠিকাদার এখন এটা ঠিক করে দেবেন।

পরীক্ষার পরে নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গবেষণাগারের পরীক্ষক মিজানুর রহমান যা বলেছেন, সেটাই সঠিক।’

ঠিকাদারের প্রতিনিধি সেকেন্দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অল্প জায়গায় এটা হয়েছে। মাল মিক্সচার করে রিমুভ করে তা ঠিক করে দেওয়া হবে।’